ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মামলাটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন দণ্ডিত সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।
ঢাকার জেলা প্রশাসক বরাবর করা এ আবেদন বর্তমানে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে মতামতের জন্য রয়েছে বলে রবিবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় মামলাটি করেছিলেন বর্তমানে কারাগারে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ওই সময় তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে মোয়াজ্জেম হোসেন উল্লেখ করেন, সোনাগাজী মডেল থানার ওসি হিসেবে তিনি গত ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর হতে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান ওরফে রাফি যৌন হয়রানির শিকার হলে তিনি অফিসারের মাধ্যমে তাকে (নুসরাত) থানায় এনে অনুমতি নিয়ে জবানবন্দি ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেন। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সরকারি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য প্রমাণস্বরূপ তিনি ভুক্তভোগীসহ আরও সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ভুক্তভোগীর মায়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নিয়ে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন দাবি করেন, ওই বছরের এপ্রিলে পরীক্ষা চলাকালীন মাদ্রাসার ছাদে ভুক্তভোগীর গায়ে একদল দুষ্কৃতকারী কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক তিনি (ওসি) ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে ভুক্তভোগীর ভাইয়ের লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা নিয়ে দুই দিনের মধ্যে চারজনসহ আট আসামিকে গ্রেপ্তার করেন।
ওই সময় ঘটনাটি সারাদেশ তথা বিশ্ব মিডিয়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এর প্রেক্ষিতে থানায় সব সময় মিডিয়াকর্মীসহ সবার ভিড় লেগে থাকত। এর ফাঁকে তার অজ্ঞাতে মোবাইল হতে সময় টিভির স্থানীয় একজন প্রতিনিধি আতিয়ার রহমান সজল ভিকটিমের দেওয়া জবানবন্দি মোবাইলে শেয়ারইটের মাধ্যমে নিয়ে নেন। ১০ এপ্রিল ভিকটিম মারা যাওয়ার পর তার জবানবন্দির ওই ভিডিও ভাইরাল হয়, যা নিয়ে ১৪ এপ্রিল তিনি থানায় জিডি করেন। ১৬ এপ্রিল ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এ ঘটনায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন।
বিচারক মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআই পিটিশনটির তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টে তদন্ত কর্মকর্তা কোন মোবাইল বা আইডি হতে ভিডিওটি পোস্ট হয়েছে, তা উল্লেখ করেননি। কে করেছে, তিনি তার তদন্ত না করে রিপোর্ট শেষে ‘ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে’ মর্মে রিপোর্ট দিলে ট্রাইব্যুনাল নিয়ম মোতাবেক সমন না দিয়ে সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে হাইকোর্টে জামিনের জন্য গেলে পুলিশ তাকে (ওসি) গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে।
আদালত জামিন না দিয়ে ঘটনাস্থলের সাক্ষীদের পরীক্ষা না করে শুধুমাত্র বাদীর মনোনিত সাক্ষ্য নিয়ে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করেন। একপর্যায়ে প্রায় ৫ বছর জেল খেটে হাইকোর্টে আপিল করে জামিনে মুক্ত হন তিনি। বাদী থেকে শুরু করে পিবিআই কর্তৃক অভিযোগ দাখিল, আদালতে চার্জ গঠন এবং সাজা প্রদান কোথাও আইনের অনুসরণ করা হয়নি। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ ধারার বিধান অনুযায়ী ব্যারিস্টার সুমন এই মামলার বাদী হতে পারেন না। তাকে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ ভিকটিমের কেউ নিয়োজিত করেননি। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আইনজীবীর কোনো বক্তব্য আমলে না নিয়ে অজ্ঞাত কারণে তড়িঘড়ি করে চার্জ গঠন করে ঘন ঘন তারিখ রেখে বিচারকার্য সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ সাজার ফরমাইশি রায় প্রদান করেন। তিনি বিগত সরকারের নির্যাতনমূলক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’ প্রায় ৫ বছর সাজা খেটে আপিল করে জামিনে মুক্ত হয়েছেন।