রাজধানী ঢাকার হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়াকে রুপা (২০) ও নাজিম (২২) নামে এক নবদম্পতি ধর্ষণের অভিযোগ তুলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ফরিদপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করার পর শিক্ষক সাইফুর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে উত্তরখান থানা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে সোমবার (১০ মার্চ) ভোর রাতে রাজধানীর উত্তরখানে নিজ বাসায় খুন হন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া। পুলিশের ধারণা, রাত সাড়ে চারটার দিকে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। খুনি দম্পতিকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানা যায় বলে উল্লেখ করে উত্তরখান থানা পুলিশ।
থানা সূত্র জানায়, গত ৫ মার্চ এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে শিক্ষক সাইফুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় এই নবদম্পতির। তারা বাসা থেকে পালিয়ে শহরে আশ্রয়ের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তাদের এই অসহায়ত্বের কথা ভেবে দম্পতিকে নিজের বাসায় আশ্রয় দেন শিক্ষক সাইফুর রহমান। বাসায় আসার পর সাইফুর রুপাকে ধর্ষণ করে—এমন অভিযোগে ওই দম্পতি সাইফুর রহমানকে হত্যা করে পালিয়ে যান।
তাদের গ্রেফতারে পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনিরা দাবি করেছেন, এই হত্যার পেছনে ধর্ষণকাণ্ড রয়েছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, আজ (মঙ্গলবার) ফরিদপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাল তাদের আদালতে তোলা হবে।
উল্লেখ্য, মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক থাকাকালীন কলেজটির ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ ছিলেন। রাজধানীর শান্তিনগরে পীর সাহেবের গলিতে একটি বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন। কলেজের নানা অভিযোগে তার চাকরি চলে যাওয়ার পর ছয় মাস ধরে তিনি উত্তরখানের পুরান পাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় একাই থাকতেন।
সোমবার সকালে উত্তরখানের ভাড়া বাসা থেকে প্রতিবেশীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। পরে উত্তরখান থানা পুলিশ তার সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে মরদেহ পাঠায়।
পুলিশ জানায়, তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে বাথরুমে আটকে রেখে সটকে পড়ে দুর্বৃত্তরা। পরে বাথরুমের দরজা ভেঙে বের করে প্রতিবেশীরা উত্তরার একটি হাসপাতালে নিলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিহত শিক্ষকের স্ত্রী সাদিয়া রেহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি কয়েক মাস ধরে আলাদা থাকেন। কোনও কিছুর প্রয়োজন হলে বাসায় আসতেন। আবার চলে যেতেন। তবে তিনি পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। কোথায় থাকে জানতে চাইলে বলতেন বন্ধুর বাসায় থাকেন। কোন বন্ধুর বাসায়—তা বলতেন না। পরে সোমবার বিকালে থানার ওসি ফোন করে হত্যার বিষয়টি তাদের জানান।
এ ঘটনায় সাইফুর রহমানের ভাই মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাইফুর রহমান উত্তরখানে ভাড়া বাসার পাশে তার স্ত্রীর পৈতৃক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণের উদ্দেশ্যে ৩-৪ মাস ধরে বসবাস করছিলেন। সোমবার বিকাল ৫টার দিকে তার সহকর্মী কবির স্যার ফোন করে জানান— অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সাইফুর রহমানকে নিজ বাসায় হত্যা করেছে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে লেকভিউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ভাড়াটিয়াদের মাধ্যমে জানতে পারেন, ২-৩ দিন আগে অজ্ঞাতনামা একজন নারী ও একজন পুরুষ তার ভাইয়ের ফ্ল্যাটে ওঠে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তারা নিখোঁজ।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন সকাল ৫টা ১০ মিনিটে ফ্ল্যাটের বিপরীত পাশের ভাড়াটিয়া ফয়সাল কবির কেয়ারটেকার কোহিনুর বেগমকে খবর দেন। তিনি প্রতিবেশী নেহাল, আবু জাফর, জনি ও কাউছারকে জানালে তারা এসে সাইফুর রহমানকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সকাল ৭টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রোববার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে দুর্বৃত্তরা ফ্ল্যাটে ঢুকে পরিকল্পিতভাবে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। পরে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে পালিয়ে যায়।
নিহত সাইফুর রহমান ভূঁইয়ার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার বাসুদেব গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত খলিলুর রহমান ভূঁইয়া।