লড়াকু হুতি বাহিনীর কাছে আগ্রাসি মার্কিন সামরিক দাপট যেন পাত্তাই পাচ্ছে না। ইয়েমেনের ওই প্রতিরোধ গোষ্ঠী আবারও একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির কমপক্ষে তিনটি এলাকা লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা চলার সময় ওই ঘটনা ঘটে। দেশটির উত্তর-পশ্চিম হাজ্জাহ প্রদেশে হামলা চালানোর সময় ৩০ মিলিয়ন ডলার দামের ড্রোনটি ধ্বংস করা হয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে, হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানান, তাদের আকাশ বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী হাজ্জাহ প্রদেশের আকাশসীমায় সামরিক অভিযান চালানোর সময় এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করে। তারা এপ্রিল মাসে এই নিয়ে সাতটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ১৮ মাস আগে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীটি মোট ২২টি এমকিউ-৯ ড্রোন ধ্বংস করল।
নিজস্ব শক্তিশালী সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে বিশ্বজুড়ে নিজেদের সামরিক শক্তির যে প্রচারণা যুক্তরাষ্ট্র চালায়, ইয়েমেনের মতো দেশে আগ্রাসন চালাতে গিয়েই তা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যাচ্ছে যেন। এর অন্যতম কারণ হল, হুতি বিদ্রোহীরা বর্তমানে বেশ কয়েক ধরনের শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের মালিক।
এখন হুতি বাহিনীর হাতে রয়েছে স্কাড-বি এবং স্কাড-সি ক্ষেপণাস্ত্র, উত্তর কোরীয় হোয়াসং সিরিজের সংস্করণ, টোচকা ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র, কাহের-১ ক্ষেপণাস্ত্র, জেলজাল-৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সি-৮০২ অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। তাছাড়া ভূমি থেকে আকাশে আক্রমণের জন্য হুতি যোদ্ধারা ব্যবহার করে সোভিয়েত প্রযুক্তিতে তৈরি ২কে১২- কাব মিসাইল। এসব অস্ত্র গোষ্ঠীটি ইরানের সহায়তায় সংগ্রহ করে বলে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার করে থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, হুতি গোষ্ঠীর হাতে থাকা ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ওইসব ক্ষেপণাস্ত্রের দাম ৫ লাখ ডলারেরও কম বলে জানা যায়। তুলনামূলক অল্প দামের এসব যুদ্ধাস্ত্র যখন ৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এমকিউ-৯ ড্রোনের যমদূত হয়ে ওঠে, তখন পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই লোকসান আর লজ্জার বলা যায়।
ঠিক কোন ইস্যুতে ইয়েমেনের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্র এমন লজ্জায় পড়ছে? হুতি-অনুমোদিত সংবাদমাধ্যম আল মাসিরাহ জানায়, মঙ্গলবার রাতে লোহিত সাগরের কামরান দ্বীপ লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়। পশ্চিম ইয়েমেনের আল সালিফ জেলায় দুটি বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির উত্তরে সাদা প্রদেশের আল-সালিম জেলাতেও চারটি বিমান হামলা হয়।
গত মার্চ মাস থেকে ইয়েমেনে প্রায় প্রতিদিনই মারাত্মক বিমান হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলাকারীরা হুতিদের স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করছে। অথচ সেইসব হামলায় নারী ও শিশুসহ ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এসব অভিযান চালাতে গিয়ে হুতিদের প্রতিরোধের মুখ যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ২২টি ড্রোন হারিয়েছে, তাছাড়া মার্কিন শৌর্য্যের প্রতিক বিমানবাহী রণতরীও আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি হুতিদের।
ইয়েমেনে হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান পথ লোহিত সাগর দিয়ে চলাচল করা জাহাজে হুতি গোষ্ঠীর সবধরণের আক্রমণ বন্ধ না করা পর্যন্ত তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে। হুতি বাহিনী মার্কিন হামলা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ইসরায়েলি ও ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে আক্রমণ করা অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েল যখন গাজায় যুদ্ধ শেষ করবে, তখনই তারা তা বন্ধ করবে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের জবাবে হুতি বাহিনী ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কিত জাহাজে ১০০টিরও বেশি আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানা গেছে। তাই হুতিদের দমাতে লোহিত সাগরে অভিযানে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহেও ইয়েমেনের হোদেইদার বন্দর এবং বিমানবন্দরে ১৩টি বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। হোদেইদার রাস ইসা বন্দরে এ পর্যন্ত সবচেয়ে মারাত্মক হামলার তিন দিন পর ওই হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত এবং ১৫০ জনেরও বেশি আহত হয়।
এই বছরের শুরুতে গাজায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সময় হুতি গোষ্ঠী জাহাজে আক্রমণ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু গত মাসে ইসরায়েল অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলটিতে আবারও হামলা শুরু করার পর ইয়েমেনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি আবারও লোহিত সাগর অবরোধ করার অঙ্গীকার করে।
লোহিত সাগর আর সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ চলাচলের জলপথটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট। বিশ্বে প্রায় ১২ শতাংশ জাহাজ ওই পথে চলাচল করে। হুতিদের অবরোধের ফলে অনেক জাহাজ দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ব্যয়বহুল বিকল্প রুট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।