যুদ্ধবিরতিতে কাশ্মীরে জনমনে স্বস্তি, সতর্ক অবস্থানে ভারত

মত ও পথ ডেস্ক

যুদ্ধবিরতিতে কাশ্মীরে স্বস্তি
যুদ্ধবিরতিতে কাশ্মীরে স্বস্তি। সংগৃহীত ছবি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর জম্মু-কাশ্মীরের জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। কাশ্মীরের শ্রীনগরে গতকাল রোববার বাজারঘাটে সাধারণ মানুষের আনাগোনা দেখা গেছে। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) রোববার (১১ মে) রাতটি ছিল একদম শান্ত— রোববার (১২ মে) সকালে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

তবে এখনো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ভারত। কোনো আঘাত এলে তা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেশটির সেনা ও বিমানবাহিনীকে।

এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন নতুন পোপ লিও চতুর্দশ। তিনি বলেছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির যে ঘোষণা এসেছে, তাকে আমি স্বাগত জানাই। আমি আশা করছি, সমঝোতার মাধ্যমে আমরা একটি স্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব।’ এই যুদ্ধ ছাড়াও ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলা হয়। এরপর থেকেই উপমহাদেশের পারমাণবিক শক্তিধর দুই বৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সন্ত্রাসী হামলার দুই দিন পর দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) এপার-ওপার থেকে গোলাগুলি শুরু হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ এই অবস্থা চলার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারতীয় বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে। এর জবাবে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস’ পরিচালনা করে। বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, এবার ভারত ও পাকিস্তান যে সংঘাতে জড়িয়েছে, তা গত কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ। ইতিমধ্যে উভয় পক্ষের মিলিয়ে ৬০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এরপর গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের জন্য তিনি উভয় পক্ষকে অভিনন্দন জানান। ভারত ও পাকিস্তানের তরফ থেকেও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকে স্বস্তি ফিরতে থাকে দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায়।

যুদ্ধবিরতিতে কাশ্মীরে স্বস্তি

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কাশ্মীরের বাসিন্দারা। উড়ি শহরের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যখন শুনতে পাই যুদ্ধবিরতি হয়েছে, তখন থেকেই আমরা খুব খুশি। মানুষ গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে। আমাদের শেষ আশা হলো, আমরা পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব।’

কাশ্মীরের কুপাওয়ারা এলাকার এক বাসিন্দা (৩০) বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির খবর শুনে মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসছে, তারা রাজনীতি নিয়ে কথা বলছে, আড্ডা দিচ্ছে। একদিন আগেও মানুষ এই এলাকা থেকে যাওয়ার কথা ভেবেছে। এরপর তারা এমন খবর শুনতে পেয়েছে। আমরা খুবই খুশি এবং আশাবাদী।’

এদিকে যুদ্ধবিরতির খবর প্রচারের পর বাজারঘাট খুলতে শুরু করেছে কাশ্মীরে। সাধারণ মানুষকে রাস্তায় ঘুরতে দেখা গেছে। শ্রীনগরের বাসিন্দা মোহাম্মদ তাহির সিএনএনকে বলেন, এ যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীলতার আশার আলো দেখাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে সমাধান না হলে আবারও সংকট শুরু হবে।

যুদ্ধবিরতির আগের অবস্থা তুলে ধরে জম্মুর আইনজীবী দিপিকা পুশকার নাথ বলেন, ‘সবকিছু বন্ধ ছিল। কেউ বাইরে বের হতেন না। বাজারঘাট একেবারে বন্ধ ছিল। এরপর মানুষ ট্রাম্পের (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) পোস্ট দেখতে পান। এটাই ছিল স্বস্তির। কিছু মানুষের ধারণা ছিল, খুব দ্রুত যুদ্ধ শেষ হবে। অনেকেই মনে করতেন, ভারতের লড়াই চালিয়ে যাওয়া উচিত। তবে আমরা খুশি, জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।’

সতর্ক ভারতের বাহিনী

কলকাতার গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সেনা কমান্ডারদের ‘পূর্ণ ক্ষমতা’ দিয়েছেন সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীও। তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা করা হলে প্রত্যাঘাতের ‘পূর্ণ ক্ষমতা’ কমান্ডারদের হাতে।

এদিকে ভারতের বিমানবাহিনীকেও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো হামলা হলে তার পাল্টা জবাব দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে এই বাহিনীর প্রতি। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের বিমানবাহিনী বলেছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই অভিযান এখনো চলমান। বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি হলেও বিমানবাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য।

শেয়ার করুন