আবারও হেডিংলিতে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত জয়

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

প্যাট কামিন্সের বলে মিড-অনে চার হাঁকিয়েই বেন স্টোকস হাত শূন্যে ছুঁড়ে দিচ্ছেন, তাতে পুরো গ্যালারিও অংশ নিচ্ছে– হেডিংলির ইতিহাসে দুর্দান্ত এক ছবিই হয়ে ছিল এতদিন সেটা। ২০১৯ সালের সেই অ্যাশেজের মতোই আরও একটা দুর্দান্ত রানচেজ দেখা গেল গতকাল মঙ্গলবার। ভারতের বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টের ৫ম দিনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৫০ রান।

প্রতি সেশনে ১০০ এর বেশি রান দরকার ছিল। টেস্টের সাপেক্ষে সেটা খানিক বেশিই বৈকি! কিন্তু ইংল্যান্ড যে বাজবলের তত্ত্বে বিশ্বাসী। দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে পুরোটা দিন জুড়ে। ৮২ ওভারের মাথায় বের করে এনেছে ম্যাচটা। আরও একবার হেডিংলি জানান দিলো, টেস্টই ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্য্য। যদি কেউ ফলাফল বের করে আনতে চায়, তবে বনেদি ঘরানার এই ম্যাচেই মিশে থাকে ক্রিকেটের মূল রোমাঞ্চ।

ইংল্যান্ড দিনের শুরু থেকেই খেলেছে ম্যাচ বের করে আনার তাগিদে। আগের দিনেই জশ টাং বলেছিলেন তার দল ম্যাচে ফল আনার জন্যই খেলবে। বোলার টাংয়ের সেই কথা রেখেছেন দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি এবং বেন ডাকেট। রেকর্ড গড়া ১৮৮ রানের পার্টনার এসেছে দুই ওপেনারের সুবাদে। এটি ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ। পেছনে পড়েছে ১৯৫৩ সালে ত্রিনিদাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৪২ রানের অপরাজিত জুটিটা।

জ্যাক ক্রলি এদিন সেঞ্চুরি পাননি। প্রাসিধ কৃষ্ণা প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তাকে। আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান অলি পোপও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ৮ বলে ৮ রান করেই ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। এরপর ক্রিজে আসেন টেস্টের নাম্বার ওয়ান ব্যাটার জো রুট। শুরুতে কিছুটা নড়বড়ে থাকলেও ধীরে ধীরে নিজেকে ক্রিজে থিতু করেছেন। সুযোগ পেলেই বলকে করেছেন সীমানাছাড়া।

অপরপাশে বেন ডাকেট অবশ্য ছুটছিলেন তখন। সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চের রেকর্ডও করেছেন। আগে যেটা ছিল জো রুটের (১৪২*) দখলে। সেটাকেই ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি। যদিঅ দুর্ভাগ্য বলতে হবে তার। ড্যাডি সেঞ্চুরি মিস করে যান ১ রানের জন্য। শার্দুল ঠাকুরের বলে যখন আউট হয়েছেন, তখন তার স্কোর ১৪৯। এরপরের বলেই ফিরে যান হ্যারি ব্রুকও।

ভারত তখন ম্যাচে কিছুটা ফেরার আভাস দিয়েছিল বটে। তবে বেন স্টোকস তো আছেনই! জো রুটের সঙ্গে ইংলিশ অধিনায়কের ৭৭ বলে ৪৯ রানের জুটি হারের শঙ্কাটাই উড়িয়ে দেয় ইংলিশদের মধ্যে থেকে। রবীন্দ্র জাদেজার বলে রিভার্স সুইপে টাইমিং ভুল করার আগে এদিন দারুণ ছন্দে ছিলেন স্টোকস। তার আউটের পর ইংল্যান্ডের জন্য শঙ্কা ছিল কেবল বৃষ্টি।

জেমি স্মিথ শুরু থেকেই ছিলেন আত্মবিশ্বাসী আর জো রুট তখনও ক্রিজ আগলে রেখেছেন। ড্রিংক্স ব্রেকের সময় দরকার ছিল ১৬ রান। জাদেজার পরের ওভারেই তিন বাউন্ডারি দলের জয় নিশ্চিত করেন স্মিথ।

এর আগে হেডিংলিতে ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দল লড়াই করেছে সমানে সমান। প্রথম ইনিংসে শুভমান গিল, যশস্বী জয়সওয়াল আর ঋশাভ পান্তের সেঞ্চুরিতে ৪৭১ রানের বড় এক সংগ্রহ দাঁড় করায় সফরকারী ভারত। জবাবে জ্যাক ক্রলির ফিফটি আর অলি পোপের সেঞ্চুরিতে দারুণ জবাব দেয় ইংল্যান্ড। পরবর্তীতে হ্যারি ব্রুক আর শেষদিকে ওকস-কার্সের জুটিতে ইংল্যান্ড গিয়েছে ৪৬৫ পর্যন্ত।

দ্বিতীয় ইনিংসে দুই সেঞ্চুরির সুবাদে ভারত সংগ্রহ করেছে ৩৬৪। কেএল রাহুল পেয়েছেন সেঞ্চুরি। আর ঋশাভ পান্ত মাত্র দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে আদায় করেন জোড়া সেঞ্চুরি। ৬ রানের লিডের সুবাদে ভারত শেষ পর্যন্ত চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডকে দিয়েছে ৩৭১ রানের টার্গেট। জবাবে ২১ রান করে ৪র্থ দিন শেষ করেছিল স্বাগতিকরা।

৫ম দিনে ম্যাচ জিততে তারা স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ৩৫০ রান। যা টেস্টে জয় পাওয়া ম্যাচের ইতিহাসে শেষদিনে ২য় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

শেয়ার করুন