জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ‘ইন্ধন বা সম্পৃক্ততা’ নেই বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। একই সঙ্গে চলমান সমস্যা সমাধানে সরকারকে দ্রুত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সময় ব্যয় না করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিডার যৌথভাবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা খুবই জরুরি।
এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগের মাধ্যমে কার্যক্রম চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তবর্তী সরকার। কিন্তু আন্দোলনের মুখে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ স্থগিত হলেও সংস্থাটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে শনিবার সকাল থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন।
এরই মধ্যে গত বুধবার (২৫ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনবিআর সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে কর্মচারীদের আন্দোলনের সঙ্গে আওয়ামী সরকারের সময়কার কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর ‘ইন্ধন’ থাকার বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘এটা ভুল। এই অনুষ্ঠানে সবাই আছে। আমরা সব ব্যবসায়ীরা বসেছি এটি সমাধান করার জন্য। যদি নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রতি অভিযোগ থাকে তাহলে উনাকে স্পেসিফিক্যালি বলতে হবে যে, কে বা কোন প্রতিষ্ঠান বা কারা ইন্ধন দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প হচ্ছে সবচেয়ে বড় খাত। যেখানে রপ্তানি হয় প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার, আমদানি হয় ২০ মিলিয়ন ডলার। ৬৫ মিলিয়ন ডলার হলো ট্রানজেকশন। এটি যদি কর্মদিবস দিয়ে ভাগ করেন তাহলে এনবিআর কর্মচারীদের আন্দোলনে দৈনিক আড়াই হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। আমি বলবো না, এ পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে।
আন্দোলনের কারণে চলমান অচলাবস্থায় উদ্বেগ জানিয়ে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, চলমান অচলাবস্থার কারণে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সঠিক গুরুত্ব বুঝতে চাইছে না সরকার। দ্রুত আলোচনা করে এর সমাধান করতে হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, চলমান স্থানীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা চাপে আছেন। নতুন করে এনবিআরের অচলাবস্থার কারণে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে। এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী, এ থেকে ফিরে আসা উচিত।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোযার-উল-আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোমতেই কাম্য নয় এবং তা কোনো প্রকার সফলতা নিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি না।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনগুলো বলছে, কলমবিরতিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। রপ্তানিকারকরা সময়মত আমদানির কাঁচামাল খালাস করতে পারছেন না।
তারা বলেন, দেশের রপ্তানিতে বর্ধিত লিড টাইম আরও বাড়ছে। এছাড়া সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে পণ্য পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে। আংশিক কর্মঘণ্টার কারণে এক কর্মদিবসের মধ্যে প্রত্যাশিত ইউপি পেতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লেগে যাচ্ছে।
এসময় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজও বক্তব্য রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ৭টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে আন্দোলনরতদের কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রো চেম্বার সভাপতি কামরান টি রহমান ও সিরামিক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মঈনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।