উপদেষ্টা নেতাদের ভিড়ে চিকিৎসা-উদ্ধার ব্যাহত, সমালোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে ভিড় করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সরকারের উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা। চিকিৎসকরা জোড় অনুরোধ করলেও নেতাদের হাসপাতাল পরিদর্শন ঠেকানো যায়নি।

উপদেষ্টা, নেতাদের হাসপাতালে কী কাজ– আহতদের স্বজন এবং সাধারণ মানুষ এ প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্য, নিজেদের রাজনৈতিক প্রচারের জন্য সংবেদনশীল সময়ে হাসপাতালে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন নেতারা। উত্তরায় উদ্ধার তৎপরতার সময়ও ভিড় করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। তারা এবং উৎসুক জনতার ভিড়ে অ্যাম্বুলেন্সের গতি কমে যাচ্ছিল।

সোমবার দুপুরের দুর্ঘটনায় দগ্ধ শিশু শিক্ষার্থীদের বেলা ৩টার দিক থেকেই অ্যাম্বুলেন্সে একে একে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজসংলগ্ন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেখানে যান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও মাহফুজ আলম।

উপদেষ্টাদের গাড়ি, প্রটোকল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িতে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভিড় আরও বেড়ে যায়। উপদেষ্টাদের সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাইদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তবে দেখা যায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমকে।

নেতাকর্মীর বহর নিয়ে আহতদের দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ শতাধিক নেতাকর্মী ছিলেন দলীয় প্রধানের সঙ্গে। তাদের ভিড়ে অ্যাম্বুলেন্সের পথ আটকে যায়। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ
নেতাসহ শফিকুর রহমান হাসপাতালের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের শয্যাপাশে যান।

বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনসহ শতাধিক নেতাকর্মী। তাদের ভিড়ে অ্যাম্বুলেন্স আটকে গেলে মির্জা ফখরুল নিজেই পথ করে দেন। পরে তিনি কয়েকজন নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে যান।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীও নেতাকর্মীর বহর নিয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে যান। এ সময়ে এক নারী চিকিৎসক হাতজোড় করে অনুরোধ করেন ভিড় না করতে। এরপর রিজভী, এ্যানীসহ চারজন হাসপাতালের ভেতরে যান।

হাসপাতালে উপস্থিত স্বজনরা রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতির সমালোচনা করেন। সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এসব ঘটনার ভিডিও দিয়ে সমালোচনা করছেন। হাসপাতালে ভিড় না করতে অনুরোধ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও। তিনি বলেন, ‘আহতদের শরীরে রোগ প্রতিরোধের শক্তি নেই। আমরা ভিড় করলে, আমাদের শরীর থেকে কী রোগ তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে, এটি বলা মুশকিল। তাই দূরে থেকে দোয়া করুন সবাই।’

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মারুফ আলম চৌধুরী ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আপনারা যত বেশি আসবেন, সংক্রমণ ঝুঁকি তত বাড়বে। শিশুদের ভালোবাসার কারণেই দয়া করে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া আসবেন না। আজ রক্তের প্রয়োজন নেই।’

প্লাস্টিক সার্জন ডা. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকি হচ্ছে সংক্রমণ। তাই কোনো অবস্থাতেই রোগীর কাছে জীবাণু প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া যাওয়া যাবে না।’

তবে সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ভিড় ছিল হাজার হাজার মানুষের। তাদের কেউ আহতদের স্বজন, কেউ উৎসুক জনতা, আবার কেউ নেতাদের সঙ্গে আসা কর্মী সমর্থক।

ভিড়ের চাপে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি উপদেষ্টারা। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সাইদুর রহমান কথা বলার সময় বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জামায়াতের আমির এলে তাঁকে ঘিরে ধরা সংবাদকর্মী, ইউটিউবার, কনটেন্ট ক্রিয়েটরের ভিড়ে হাসপাতালের প্রবেশপথ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। শফিকুর রহমানকে হাত নাড়িয়ে উপস্থিত ব্যক্তিদের সম্ভাষণ করতে দেখা যায়। জামায়াতের আমিরের পর আসেন মির্জা ফখরুল। এমন সংকটের সময় রাজনৈতিক নেতাদের ভিড়ের সমালোচনা করেন রক্ত দিতে আসা সাধারণ মানুষ ও স্বজনরা।

শেয়ার করুন