গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা বেড়ে ১২, গ্রেফতার ৩১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জনসমক্ষে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির বিরুদ্ধে। ফাইল ছবি

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় নতুন আরও একটি মামলা হয়েছে। শনিবার (২৬ জুলাই) ওই সংঘর্ষে নিহত রিকশাচালক রমজান মুন্সীর ভাই জামাল মুন্সী বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জ সদর থানায় নিহতের ভাই (জামাল মুন্সী) একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সবাই অজ্ঞাত আসামি। অজ্ঞাতদের আসামি করা হলেও মামলায় সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।

গোপালগগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ নিয়ে সহিংসতার ঘটনায় ৫টি হত্যা মামলাসহ মোট ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ১০ হাজার ১৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও সহযোগী সংগঠনের ৬৮৭ জনের। এ ছাড়া বাকি ৯ হাজার ৪৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ সমস্ত মামলায় আজ শনিবার পর্যন্ত ৩১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শনিবার দায়ের করা হত্যা মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশ ঘিরে গোপালগঞ্জ শহরে যানজট ছিল। তাই রিকশাচালক রমজান মুন্সী (৩২) ব্যাটারিচালিত রিকশা গ্যারেজে রেখে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। রমজান মুন্সী শহরের লঞ্চঘাটের সামনে এসে পৌঁছালে সেখানে অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা, ঢাল-সুড়কি, রামদা, টেঁটাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল করতে করতে এনসিপির পৌর পার্কের সমাবেশস্থলের দিকে দৌঁড়ে যেতে থাকেন। বিক্ষুব্ধ লোকজন লঞ্চঘাট নামক এলাকার দোকানপাট ভাঙচুর ও পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে তারাও ধাওয়া দিয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় রমজান মুন্সী শহরের এস কে আলিয়া মাদ্রাসার ফলপট্টিতে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে অজ্ঞাত দুস্কৃতকারীরা যৌথ বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে যৌথ বাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় রমজান মুন্সী নিজেকে নিরাপদ করতে গোপালগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গীতে অবস্থিত সিনেমা হলের গলিতে অবস্থান নেন। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে সিনেমা হলের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় রমজানের বুকের ডান পাজরে গুলি লাগে। সেখানে তিনি লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমজান মুন্সী বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। নিহত রমজান মুন্সীর লাশের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেই সম্পন্ন হয়। এরপর লাশ গোপালগঞ্জ এসে পৌঁছালে শুক্রবার শহরের গেটপাড়া পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ঘটনার ১১ দিনের মাথায় আজ প্রথম পুলিশ বাদী না হয়ে ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলা করলেন। গোপালগঞ্জে এ ঘটনায় ১২টি মামলা হলেও ১১টি মামলার বাদী পুলিশ।

শেয়ার করুন