উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা

বিশেষ প্রতিনিধি

ফাইল ছবি

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন। গতকাল তিনি মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন। কিন্তু মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই কেন্দ্র ঘোষিত প্রার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে স্থানীয় উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ। তারা মনোনয়ন পুনঃবিবেচনার জন্য কেন্দ্রের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তা না হওয়ায় একই দলের আরো দুই প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। একজন হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাজেদুল। অপরজন হলেন বেলকুচি পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর সিরাজুল ইসলাম। একই দলের এই তিন প্রার্থীকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, প্রার্থী পরিবর্তন না হলে অপর দুই প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবেন। সেক্ষেত্রে এই উপজেলায় নৌকা মার্কার বিজয় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃণমূল থেকে প্রার্থী নির্বাচনের সময় সর্বোচ্চ ৯৬টি ভোট পেয়েছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা সাজ্জাদুল হক রেজা। মীর সিরাজুল পেয়েছেন ৭২ ও মোহাম্মদ আলী আকন পেয়েছেন ২৬টি ভোট। সেই তালিকা পাঠানো হয় কেন্দ্রে। কেন্দ্র থেকে মোহাম্মদ আলীকেই মনোনয়ন দেয়া হলে অন্য সমর্থক ও কর্মীরা তা মেনে নিতে পারেননি।
একই অবস্থা নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা পরিষদে। এখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনসার আলী মিন্টু। এ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগে কোন্দল রয়েছে। মনোনয়ন চেয়েছিলেন উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেল ও যুবলীগ নেতা আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুর। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন বাহাদুর। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। তাদের ভাষ্য, জলঢাকায় জামায়াত শক্তিশালী। এখানে জামায়াতকে হারাতে হলে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে নৌকাকে জেতানো যাবে না।
একই অবস্থা পার্শ^বর্তী উপজেলা ডোমারে। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ। এখানে মনোনয়ন চেয়েছিলেন উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বসুনিয়া, আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আলম বাবুল ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রিমন। তারা নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও আবদুর রাজ্জাক ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার নুরনবী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল মনোনয়ন ফরমও দাখিল করেন তারা।
এভাবে দলের সমর্থন না পেয়ে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও অনেকটাই নমনীয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছিল, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কিংবা দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে যারা কাজ করবেন বা অবস্থান নেবেন তাদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কার করা হবে। ফলে জাতীয় নির্বাচনে দলটির তেমন বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে ছিলেন না। দুয়েকটি বাদে প্রায় সব আসনেই একক প্রার্থী ছিল দলটির। আর দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। উল্টোচিত্র উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। স্বতন্ত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটির হাইকমান্ডের শক্ত কোনো অবস্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন দলটির অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি-জামায়াত অংশ না নেয়ায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার স্বার্থে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় আওয়ামী লীগ। তবে তৃণমূলে দ্বিধা-বিভক্তি বিরাজমান থাকলে বেশিরভাগ উপজেলা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ক্ষমতাসীন দলটির, এমন আশঙ্কা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের। সেক্ষেত্রে বিএনপি ও জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আমাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বিএনপি এ নির্বাচনে সরাসরিভাবে অংশ নিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে নৌকা নিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তারা খুব সহজেই বিজয়ী হয়ে আসবেন। যেসব এলাকায় দলের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হচ্ছেন, আমরা আলোচনা করেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। প্রতিটি উপজেলায় একক প্রার্থী নিশ্চিত করব। আর দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা যাবেন, তাদের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান বরাবর যা, তাই থাকবে। দলের জন্য যা ভালো, তার সবই আমরা করব।
এবার দেশের ৪৮২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচ দফার এ নির্বাচনের প্রথম দফা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ মার্চ। ১৮ মার্চ দ্বিতীয়, ২৪ মার্চ তৃতীয়, ৩১ মার্চ চতুর্থ এবং ১৮ জুন পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন উপজেলায় দেখা দেয় বিদ্রোহ ও সংঘাতও।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে