সরকার বাংলাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করছে।
ইতিমধ্যে ফিলিপাইন এই স্যাটেলাইট ব্যবহারের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন কোম্পানি (বিএসসিসিএল) জানিয়েছে, দেশ-বিদেশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক ব্যবহারের পাশাপাশি দেশের দুর্গম এবং প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার কাজ আগামী মাসে শুরু হচ্ছে।
বিভিন্ন ছিটমহলসহ দুর্গম ৪০টি এলাকায় চলতি বছরের মধ্যেই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে।
বিএসসিসিএল দাবি করছে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সম্প্রচার পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিভিন্ন দেশে এই স্যাটেলাইটের বাজার তৈরির চেষ্টা চলছে।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, থাইল্যান্ডের বাজার ধরতে ইতিমধ্যে সেদেশে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই স্যাটেলাইট বাজারজাতকরণে যেন তারা সহায়তা করেন। পরামর্শকদের মাধ্যমে আমরা ফিলিপিনে ভালো একটা অর্ডার পেয়েছি। এছাড়াও নেপালের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে। নেপালের প্রতিনিধি এদেশে এসেছিলেন।
শাহজাহান মাহমুদ জানান, দেশের যেসব এলাকায় ব্রডব্যান্ড কিংবা মোবাইল ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এখনো দেয়া সম্ভব হয়নি সেসব এলাকায় ভি-স্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া হবে। এর মধ্যে আছে ছিটমহল এবং দ্বীপ এলাকা।
এছাড়াও এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন, টেলিএডুকেশন দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইতিমধ্যে সেবা নিতে শুরু করেছে ১০টি বাংলাদেশি টেলিভিশন। নৌ-পরিবহন, মৎস্য অধিদপ্তর এবং কৃষি বিভাগসহ ৩০টির বেশি স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসসিসিএল-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ দেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ। এটি ২০১৮ সালের ১১ মে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ।
এই প্রকল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বাস্তবায়ন করে। স্যাটেলাইটটি ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপিত হয়।
কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনার জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেক সভায় দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া ‘বিডার্স ফাইন্যান্সিং’ এর মাধ্যমে এ প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হংক সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে সরকারের প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি হয়। এক দশমিক ৫১ শতাংশ হার সুদসহ ১২ বছরে ২০ কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে। এর ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত। শক্তিশালী কেইউ ও সি ব্যান্ডের মাধ্যমে এটি সবচেয়ে ভালো কাভার করবে পুরো বাংলাদেশ, সার্কভুক্ত দেশসমূহ, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া। বর্তমানে গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া আর্থ স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।