বাংলাদেশের নাগরিকরা চলতি বছরের জুন মাসে ই-পাসপোর্ট হাতে পাবে। কয়েক দফা পেছানোর পর আগামী জুন থেকে ই-পাসপোর্ট দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট পাবে দেশবাসী।
প্রথমে গত বছরের ডিসেম্বর ও পরে এ বছরের মার্চ মাসে আসার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় বিলম্ব হয় ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম।
তবে আগামী জুনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে আশাবাদী অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব (বহিরাগমন-১) মো. মুনিম হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন মাসে ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান জার্মানির ভেরিডোসের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের চুক্তি করেন। এরপর ডিসেম্বর মাসে পাসপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনে অধিদফতর।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট পাসপোর্ট হবে ১০ বছর মেয়াদের। ফি নির্ধারণ কমিটির প্রস্তাবে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার (২১ দিন), এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার (৭ দিন) এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৫ হাজার টাকা (১ দিন) প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়াও পাসপোর্টের দুই ধরনের ক্যাটাগরি হচ্ছে। একটা ৪৮ পৃষ্টার। আরেকটা ৭২ পৃষ্টার। যারা বেশি নিতে চান তাদের ফি-টাও একটু বেশি দিতে হবে।
এ বিষয়ে অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এটি ৪ হাজার কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প। বর্তমান অর্থবছরের বাজেট হয়েছে জুনে। এর মাসখানেক পর ই-পাসপোর্ট প্রকল্প চুক্তি হয়। সরকার যেহেতু বাজেটে ই-পাসপোর্টের বরাদ্দ রাখেনি তাই এই কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
অত্যাধুনিক এই ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যাতে পাসপোর্টধারীর পরিচয়ের সত্যতা থাকে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে জালিয়াতি ও পরিচয় গোপন করা কঠিন হবে বলে দাবি করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর।
পাসপোর্ট অধিদফতর জানায়, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।
জানা যায়, শুরুতে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। এরপর আরও ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সে জন্য উত্তরায় কারখানা স্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে ওই কারখানায় থেকেই পাসপোর্ট ছাপানো অব্যাহত রাখা হবে।
ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। পুরো টাকাই বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। বর্তমানে বই আকারের পাসপোর্টে সরকারের যে টাকা ব্যয় হয়, সেই অনুপাতে ই-পাসপোর্ট চালু হলে পাসপোর্ট প্রতি সরকারের প্রায় ৩ ডলার করে সাশ্রয় হবে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
এদিকে অনেকেই শঙ্কায় আছেন, ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বাতিল হবে কি না।
এ বিষয়ে অধিদফতর জানায়, কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। তবে যাদের এমআরপি রয়েছে সেটিও গ্রহণযোগ্য হবে।