ব্যবসায়ী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনমনীয় অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন নতুন ভ্যাট (মূল্য সংযোজন) আইন বাস্তবায়ন থমকে ছিল। তবে সম্প্রতি দুপক্ষের অবস্থানে কিছুটা শিথিলতা আসায় আগামী জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি এনবিআরে সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আগামী অর্থবছর থেকে সংস্কারের শর্তে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তনে একমত হয়েছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীরা প্রস্তাবিত আইনের কিছু সংশোধনী আনার শর্তে তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটি আইন সংশোধনের বিষয়ে রাজস্ব বোর্ডের কাছে তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে, এনবিআর এবং ব্যবসায়ী উভয় নতুন আইনের কিছু বিধান সম্পর্কে তাদের নিজ নিজ অবস্থানে কঠোর ছিল। যার কারণে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এই আইন বাস্তবায়ন হচ্ছিল না।
বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনের খুঁটিনাটি সব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এনবিআর তার অফিসে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ, পাইপ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ও এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন তাদের নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিআইর বাণিজ্যনীতি উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ বলেন, কমিটির প্রতিবেদনটি পর্যালোচনার পর এক সপ্তাহের মধ্যে আবার ভ্যাট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বসবেন। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিষয়ে আমরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি।
কমিটির প্রস্তাবিত সংশোধনী হলো : ভ্যাটের একাধিক হারের প্রবর্তন, শুল্ক মূল্য বাতিল করা এবং ভ্যাট আইন-১৯৯১ অনুযায়ী ভ্যাট নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান রাখা। কর্মকর্তারা জানান, কমিটি তার রিপোর্টে মূল্য ছাড়ভিত্তিক ভ্যাট হার অপরিবর্তিত রেখে একাধিক ধাপ ছাড়াই প্রস্তাব দেয়। পরে এনবিআরের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনার আলোকে বহু স্তর বিশিষ্ট ভ্যাটের প্রস্তাব রাখা হয়। যা ব্যবসায়ীদের বহুদিনের দাবি ছিল। মঞ্জুর আহমেদ বলেন, এনবিআর নতুন ভ্যাট আইনের কৌশলী বিধানগুলো সংস্কারের জন্য নমনীয় বলে মনে হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা আগে এই বিধানগুলোর বিরোধিতা করেছিল। আমি আশা করি নতুন ভ্যাট আইনের সংশোধনী আগামী মাসে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, সংশোধনী চ‚ড়ান্ত করার আগে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবে রাজস্ব বোর্ড।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে প্রবর্তনের ২১ বছর পর ২০১২ সালে পাস করা হয় নতুন ভ্যাট আইন। এর আগে দুই দফা পেছানোর পর গত বছরের জুলাই মাস থেকে নতুন ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিছু ক্ষেত্রে অব্যাহতি দিয়ে সব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানো হয়। ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তির মুখে সরকার শেষ মুহূর্তে নতুন আইনটি বাস্তবায়ন আরো দুই বছর পিছিয়ে দেয়। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন আইনটি সংসদে উপস্থাপনের আগে রাজস্ব বোর্ডের প্রয়োজনী সংশোধনী চ‚ড়ান্ত করবে। এফবিসিসিআইয়ের ভ্যাট উপ-কমিটির সহআহবায়ক মো. ইকবাল জামাল জুয়েল বলেন, নতুন ভ্যাট আইন সফলভাবে কার্যকর করার জন্য ব্যবসায়ীরা এনবিআরকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। ভ্যাট সংগ্রহের জন্য আমরা ভ্যাট কর্মকর্তাদের একটি খাতভিত্তিক টার্নওভার সীমা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছি। কারণ হঠাৎ করে উচ্চ হারে ভ্যাট আদায় করলে সামগ্রিক ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সভায়, উভয়পক্ষ সব ব্যবসায়ের জন্য ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের হার এবং ব্যবসার ওপর সম্পূরক করের বোঝা কমাতে সম্মত হয়।
অর্থনীতি