মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৭টি দেশের জোট ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ অনুমোদন করেছে।
গাম্বিয়ার নেতৃত্বে দশ সদস্যের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গত মাসে বৈঠক করে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। গত ১ ও ২ মার্চ আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের শেষ অধিবেশনে ওই সুপারিশ অনুমোদনের মাধ্যমে তা সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ওই বৈঠক ও বিশেষ কমিটিতে আলোচনায় অংশ নেয়।
নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেন। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওআইসির এই উদ্যোগকে বড় ধরনের কূটনৈতিক অর্জন হিসেবে অভিহিত করেছে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও তাদের ওপর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জবাবদিহির লক্ষ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর আইসিজে আইনি প্রতিকার পাওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে।
গাম্বিয়ার নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিপর্যায়ের কমিটি গত ১০ ফেব্রুয়ারি বানজুলে প্রথম বৈঠক করে। ওই বৈঠকে গণহত্যা সনদ, অন্যান্য মানবাধিকার ও মানবিক আইনসহ আন্তর্জাতিক আইনের নীতি অনুযায়ী আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
ওআইসি তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের আইনি প্রতিকার পাওয়ার চেষ্টায় একটি নজির স্থাপন করেছে।
ওআইসি এমন একসময় আইসিজেতে মামলার সিদ্ধান্ত নিল, যখন জাতিসংঘের আরেকটি আদালত ‘আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি)’ মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের গণবাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসার কারণগুলোর প্রাথমিক অনুসন্ধানে বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
চলতি মাসের প্রথমার্ধেই আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ের তদন্ত দলের বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের স্বাধীন, সত্যানুসন্ধানী দলের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি আন্তর্জাতিক কাঠামো সৃষ্টি করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক কোনো আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত ভয়াবহ নিপীড়নের বিচারের জন্য তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে মামলার প্রস্তুতি নেওয়াই ওই কাঠামোর কাজ।
জানা যায়, মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হওয়ায় ওই আদালতের বিচারিক এখতিয়ার ইতিমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগ তদন্ত করতে পারবেন কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে আইসিজেতে রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা সম্ভব। কারণ মিয়ানমার গণহত্যাবিরোধী সনদে স্বাক্ষর ও আইসিজের এখতিয়ার স্বীকার করেছে।