প্রথম বর্ষের ন্যূনতম ১২ জন শিক্ষার্থীকে র্যাগিং, অসামাজিক কাজে বাধ্য করার অপরাধে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ৯ ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর মধ্যে দুজনকে আজীবন, একজনকে দুই বছর এবং অপর ছয়জনকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের অপরাধের বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত ও ভুক্তভোগী সবাই যবিপ্রবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
আজীবন বহিষ্কৃত হওয়া ছাত্ররা হলেন- দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. অলি উল্লাহ (রোল-১৭১৩১২) ও মাহমুদুল হাসান (রোল-১৭১৩৩৪)। দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছেন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রজিবুল হক রজব (রোল-১৫১৩৩০)।
এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছেন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. আবদুল কাদের (রোল-১৫১৩২৩)। এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছেন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আল মুজাহিদ আফ্রিদি (রোল-১৭১৩২৮), মো. শহিদুল ইসলাম (রোল-১৭১৩১৪), মো. রোকনুজ্জামান রোকন (রোল-১৭১৩০৫), অনুপ মালাকার (রোল-১৭১৩৩০) এবং মো. শামীম বিশ্বাস (রোল-১৭১৩৩৭)।
একই সঙ্গে এ ঘটনায় পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবু বক্কর সিদ্দিকী (রোল-১৫১৩১৯), দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শতদল পাল (রোল-১৬১৩০২) ও ইমরান হোসেনকে (রোল-১৭১৩২০) চূড়ান্তভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে র্যাগিংসহ শৃঙ্খলাপরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে না মর্মে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের আইনানুগ অভিভাবকরা এবং তিনি নিজে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার না দিলে ওই তিনজন ছাত্রকেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে জানানো হয়।
রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব আরও উল্লেখ করেছেন, এর আগে র্যাগিং, যৌন নিপীড়ন এবং বিকৃত যৌনাচারে বাধ্যকরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগী ১২ জনসহ মোট ৪০ জন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পান। একই সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সঙ্গেও তদন্ত কমিটি কথা বলেন।
এ ঘটনায় জড়িত ছাত্ররা তদন্ত কমিটির সঙ্গে অসংলগ্ন, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তদন্ত কমিটি দেখেন যে, র্যাগিংয়ে জড়িত ছাত্ররা যে অপরাধ করেছে এ বিষয়ে তারা যথাযথ অনুতাপ বা দুঃখ প্রকাশ করেনি।
একইসঙ্গে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করায় র্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারে বাধ্য করানো হয়। এ সংক্রান্ত ফোনকলের রেকর্ডও তদন্ত কমিটির হাতে রয়েছে।
এ ছাড়া র্যাগিংয়ের শিকার হওয়া একজন ছাত্র ঘটনার পর থেকে চিকিৎসাধীন। ভুক্তভোগী অন্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং স্বাভাবিক হতে পারছেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে র্যাগিং রোধ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে।