নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার কুতুবআইল শিল্পএলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের সন্ত্রাসীবাহিনীর তাণ্ডব চালিয়ে অন্তত দুই শতাধিক বাড়ি ও দোকান ঘর ভাংচুর করেছে।
এসময় অন্তত ১৫ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল ও দুজনকে পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ তান্ডবে শিল্প এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক কলকারখানার লক্ষাধিক শ্রমিকের মধ্যে চরম আতংক দেখা দিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী ফতুল্লার রামারবাগ শাহী মসজিদ এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের লোকজন এ তাণ্ডব চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফতুল্লা থানা কমিনিউটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল ও বিএনপি সমর্থক তৈয়ব মিয়ার লোকজনের ওপর আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন ওরফে কাইল্যা গেসুর লোকজন ওই হামলা চালায়।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলিছিল। এরমধ্যে শুক্রবার বিকেলে মোস্তফা-তৈয়ব গ্রুপের মাদকবিরোধী অভিযানের মিছিলে তাদের এক সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে গিয়াসউদ্দিনের লোকজন।
এরপর রাত ৯টায় ফের গিয়াস উদ্দিনের লোকজন লাঠিসোটাসহ পাইপ, রামদা ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্রসহ রামারবাগ শাহী মসজিদ এলাকায় তাণ্ডব চালায়।
এতেয় দুই নারীসহ ১৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে আজিম, আকাইদ, নাজমুল ও আল আমিনের অবস্থা গুরুতর।
তাদের মাথা, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপানো হয়েছে। আহতরা প্রত্যেকেই এলাকার সাধারন লোকজন বলে জানা গেছে।
এছাড়া এলাকার সাধারন লোকজনের অন্তত দুই শতাধিক বাড়ি ও দোকান ঘর ভাংচুর করা হয়। এদের মধ্যে গফুর মিয়ার ভাড়াটিয়া বাড়িতে ব্যাপক তান্ডব চালানো হয়।
এ বাড়িতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের থাকার ৪টি টিনের ঘর কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করে লুটে নেয়া হয় আসবাবপত্রসহ টাকা পয়সা। ভয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাৎক্ষনিকই এলাকা ছেড়েছেন।
পরে খবরপেয়ে মোস্তফা কামাল ও তৈয়ব মিয়া প্রায় কয়েকশত লোকজন নিয়ে এলাকায় এসে বিক্ষোভ মিছিল করে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক একাধিক গার্মেন্ট মালিক ও শ্রমিকরা জানান, কুতুবআইল শিল্প এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক কলকারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় অন্তত লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে।
এসব শ্রমিকরা এ এলাকায় বসবাস করে। শ্রমিকদের কারখানার বাইরে যাতায়াত করতে হয়। সন্ত্রাসীদের এমন তাণ্ডবে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আতংক দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় খানপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অমির রায় জানান, আহতদের অধিকাংশই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন। মাথায় ও পায়ে গুরুতর জখম হওয়া রোগীই বেশি।
আমরা ৪ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করেছি বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
কমিনিউটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল জানান, ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম। ওসি সাহেবের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি এলাকার নিরীহ লোকজনের উপর গিয়াস উদ্দিনের লোকজন হামলা চালিয়ে অসংখ্য বাড়ি ও দোকান ঘর ভাংচুর করেছে এবং সাধারণ লোকজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এবিষয়ে ওসি সাহেবের কাছে আমি বিচার চেয়েছি।
আহত আকাইদের বাবা রাজ্জাক মিয়া জানান, আমি এলাকায় কোন গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। তারপরও গিয়াস উদ্দিনের লোকজন আমার বাসায় হামলা চালিয়ে বাড়ি ভাংচুর করেছে এবং আমার ছেলেকে কুপিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
আহত আজিমের ছোট বোন শিমু জানান, আমাদের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে গিয়াস উদ্দিনের লোকজন। চারটি টিনের ঘর কুপিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ভাড়াটিয়া গার্মেন্টকর্মীদের সবর্স্ব লুটে নিয়েগেছে।
যাওয়ার সময় সামনে পেয়ে আমার ভাইসহ দুজনকে কুপিয়ে ফেলেগেছে। আমার ভাইয়ের অবস্থা আশংকাজনক। আমি সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।
এবিষয়ে গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হামলা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত।