রাজউকের অনুমোদন ছাড়া বহুতল ভবন তৈরি হয় কীভাবে!

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি


বনানীতে অগ্নিকা-ের পর বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে জোরালোভাবে আলোচনা হচ্ছে। একই সঙ্গে সামনে আসছে রাজধানীতে অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের অবস্থান নিয়েও। সাধারণত কোথাও আগুন লাগলে বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হলেই আমরা এ ধরনের আলোচনায় সরব হয়ে উঠি। বাস্তবতা হচ্ছে- স্থায়ী সমাধানের পথ কিংবা সচেতন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কমই দেখা যায়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে বহুতল ভবনের প্রায় ৯০ শতাংশেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। অথচ রাজধানীতে যেন বহুতল ভবন নির্মাণের ধুম পড়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে চোখের সামনে এতগুলো বহুতল ভবন নিয়ম না মেনে কিভাবে তৈরি হচ্ছে?

আমরা জানি- রাজধানীতে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের মূল তদারকির দায়িত্বে রয়েছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। তাহলে কী বলা যায় এ ক্ষেত্রে রাজউক চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। অথচ দেশে নিরাপদ ভবন বা ঝুঁকিমুক্ত অট্টালিকা নির্মাণের জন্য যথোপযুক্ত আইন রয়েছে। ১৯৫২ সালে প্রণীত আইনের আলোকে বর্তমানে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা। কিন্তু এসব আছে শুধু নথিপত্রে। আইন ও বিধিবিধান বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা যেমন নেই, তেমনি তদারকির জন্যও নেই কোনো কর্তৃপক্ষ।

আমরা মনে করি- মূলত এ কারণেই একের পর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় ২২ লাখ স্থাপনা রয়েছে। এক তলা থেকে ছয় তলার স্থাপনা ২১ লাখ ১২ হাজার আর সাত তলা থেকে ২৪-২৫ তলা ভবন আছে ৮৮ হাজার।

নগরীর বহুতল ভবনের ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের সক্ষমতার ওপর বুয়েট ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে ২০১১ সালে একটি সার্ভে করা হয়। এ সময় রাজধানীর ৫৩টি ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, নগরীর বহুতল ভবনের ৯০ শতাংশেরই অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ৭শ ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সঠিক পাওয়া যায়নি। আমরা ভেবে বিস্মিত হই যে, রাজউকের অনুমোদন ছাড়া রাজধানীতে বহুতল ভবন তৈরি হতে পারে কীভাবে! অগ্নিকা-, ভবনধসের মতো দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেন, কিছুদিন কর্মতৎপরতা বেড়ে যায়। আমরা লোক দেখানো এমন কর্মকা- প্রত্যাশা করি না।

রাজধানীকে নিরাপদ ও বসবাসযোগ্য করার জন্য অবৈধভাবে, কোড না মেনে, অনিয়ম করে স্থাপনা নির্মাণ রোধ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, নির্মাণ প্রকল্প শনাক্ত করে অনিয়মকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজন হলে আইনি সংস্কার করতে হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে