ব্রেক্সিট ইস্যুতে নতুন গণভোট আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তাতে সমর্থন রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্রিটিশ জনগণের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালিত এক জনমত জরিপের ফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নতুন গণভোটকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রায় ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক। ব্রেক্সিট অচলাবস্থা নিরসনে নতুন গণভোটের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হলেও ইন্ডিপেন্ডেন্টের জরিপে দেখা গেছে এই ইস্যুতে ব্রিটেন এখন সবচেয়ে বেশি বিভক্ত।
২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের রায় অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ত্যাগের কথা ছিল যুক্তরাজ্যের। ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের শর্ত নির্দিষ্ট করে তৈরি হয় ব্রেক্সিট চুক্তি। এ চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তিন দফায় তা হাউস অব কমন্সে পাস করাতে ব্যর্থ হন। তবে তৃতীয় দফায় চুক্তিটি পার্লামেন্টে তোলার আগে ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ব্রেক্সিট বিলম্বিত করতে সমর্থ হন থেরেসা মে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির বিকল্প নির্ধারণেও ব্যর্থ হয়েছে পার্লামেন্ট। ব্রেক্সিট প্রশ্নে নতুন গণভোটের দাবিতে গত মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছে লাখ লাখ মানুষের মিছিল। কয়েক মাস ধরেই ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন গণভোট আয়োজনের পক্ষে সমর্থন ৫০ এর সামান্য নিচে থেকে যাচ্ছিলো। তবে এপ্রিলের শুরুতে বিএমজি রিসার্চের জরিপে প্রথমবারের মতো এর পক্ষে জনমত ৫০ শতাংশ ছাড়ায়। এ পরিস্থিতিতে ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ জনগণের বর্তমান অবস্থান কেমন তা নিয়ে একটি জনমত জরিপ চালিয়েছে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।
এপ্রিলের শুরুতে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের মধ্যে জরিপ চালায় ইন্ডিপেনডেন্ট। তাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কী মনে করেন আলোচনার ফলাফল যাই আসুক না কেন-চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হোক বা না হোক, ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটেনের জনগণের চূড়ান্ত ভোট দেওয়া উচিত? দেখা গেছে, প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষ নতুন গণভোটকে সমর্থন দিয়েছে। ২৯ শতাংশ জোরালোভাবে, ২৩ শতাংশ খানিকটা সমর্থন দেন। কেবল মাত্র ২৪ শতাংশ নতুন গণভোটের বিরোধিতা করেছে। বাকি ২৪ শতাংশের উত্তর ছিল ‘জানি না’।
নতুন গণভোট আয়োজনে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন থাকলেও ওই জরিপের ফলাফলেই গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে জটিলতা উন্মোচিত হয়েছে। ইন্ডিপেনডেন্টের জরিপের অংশ হিসেবে ব্রিটিশ নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নতুন গণভোটের প্রশ্ন কী হবে? এর মধ্যে সম্ভাব্য কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে জনমত জানতে চাওয়া হয়েছিল। জরিপের ফলে দেখা গেছে, থেরেসা মে’র চুক্তিসহ ব্রেক্সিট নাকি চুক্তিহীন ব্রেক্সিট? গণভোটে এ প্রশ্নটি রাখার ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েছে ২৭ শতাংশ মানুষ।
এছাড়া ইইউতে থেকে যাওয়া হবে নাকি থেরেসা মে’র চুক্তিসহ ব্রেক্সিট হবে- এ প্রশ্নটিকে ৩২ শতাংশ এবং চুক্তিহীন ব্রেক্সিট নাকি ইইউতে থেকে যাওয়া হবে এ প্রশ্নটিকে ২৬ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছে। গণভোটে কোন প্রশ্নটি করা হবে সে ব্যাপারে ১৬ শতাংশ মানুষ জানি না উত্তর দিয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে গণভোটে কী প্রশ্ন করা হবে তা নিয়ে ব্রিটেনবাসীর স্পষ্ট কোনও পছন্দ নেই। অনেকেই চান চুক্তিহীন ব্রেক্সিট, কেউ চান ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যেতে, আবার কেউ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রস্তাবকেই সমর্থন করেন। বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন ব্রেক্সিট চুক্তি গ্রহণযোগ্য হবে না যদি এতে যুক্তরাজ্যকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে না দেওয়া হয় এবং ইউরোপীয়ান আদালতে রায় কার্যকর থেকে নিষ্কৃতি না পায়।