আম চাষে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক বা কেমিকেল যেন প্রয়োগ করতে না পারে এ জন্য দেশের আমবাগানে পুলিশ মোতায়েনে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি আজ (১৬ এপ্রিল)।
এদিন আপিল বিভাগের বিচারপতি নুরুজ্জামানের চেম্বারজজ আদালতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন রিটকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
আমের মধ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর যে কোনো ধরনের রাসায়নিক বা কেমিকেল প্রয়োগ না করা সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে সোমবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন বলেও জানান রিটকারী এই আইনজীবী।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল আমে যেন কোনো ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ করতে না পারে তা দেখার জন্য রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমবাগানে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সাতদিনের মধ্যে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজিকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
এছাড়া ফলের বাজার ও আড়তে আমসহ অন্যান্য ফলে রাসায়নিক মেশানো বা ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে কিনা তা নজরদারি করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করতে বলা হয়। পুলিশের আইজি, বিএসটিআই, র্যাব মহাপরিচালককে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিটের সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৯ এপ্রিল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম।
আমের মৌসুমকে সামনে রেখে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রয়োগ ঠেকাতে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বড় আমবাগানে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইজিপি, র্যাব মহাপরিচালক, বিএসটিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (কেমিক্যাল টেস্টিং উইং) দেশের বড় বড় ফলের বাজার ও আড়ত মনিটরিংয়ে টিম গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজিকে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলসহ দেশের যেসব জেলায় বড় আমবাগান রয়েছে, সেখানে পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে মনিটরিং টিমে যুক্ত হওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে এ-সংক্রান্ত ২০১২ সালের রায়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়ন করে শিল্প সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, খাদ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিএসটিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, র্যাবের মহাপরিচালক, বিএসটিআইয়ের পরিচালক (কেমিক্যাল টেস্টিং উইং), রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এবং এনবিআর চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে মনজিল মোরসেদের করা এক রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ রায় দেন। রায়ে সাত দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। সেখানে আমের মৌসুমে রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ এবং একটি পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করতে বলা হয়। যার ধারাবাহিকতায় নতুন করে আমের মৌসুম আসায় আইনজীবী হাইকোর্টে এক সম্পূরক আবেদন করে নির্দেশনা চান।