অনেক লড়াই আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় শহর হওয়ায় দেশ স্বাধীনের আগে বিহারি অধ্যুষিত এলাকা ছিল এটি। আর যুদ্ধ চলাকালীন এপ্রিল মাসেই লালমনিরহাটে বিহারিদের মদদে বিশাল হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক সেনারা।
নিরীহ মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে জেলা শহরের রেলওয়ে ওভার ব্রিজের পশ্চিমের খোলা জায়গায় জড়ো করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এবং মরদেহ গুলো যত্র তত্র ফেলে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবে এই ভেবে বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে যুবক ছেলেদের ধরে নিয়ে যায় পাক সেনারা।
বিভিন্নভাবে শারিরীক নির্যাতন করে মেরে ফেলে। এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখে রেলওয়ে করণিক এম এ হাফিজ ও তার ছেলে বেলাল সুজার বাসায় হানা দেয় পাক সেনারা। এবং পরিবার পরিজনের সামনেই তাদেরকে ধরে নিয়ে হত্যা করে মরদেহ দুটো রেলওয়ে কোয়াটারের পাশেই ফেলে যায়।
স্বামী-সন্তান হারিয়ে ও সহায়-সম্বল ছেড়ে জীবন বাঁচার তাগিদে এম এ হাফিজের স্ত্রী হালিমা হাফিজ ঢাকায় চলে যায়। দীর্ঘদিন পর হলেও সে সময় খান সেনাদের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া সন্তান জেলাল শফিকে নিয়ে লালমনিরহাটে স্বামীর কবরের সন্ধানে নেমে পড়েন।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে যোগাযোগ করে আলোরুপা মোড়ের পাশেই সাহেবপাড়ায় খুঁজে পান স্বামী ও সন্তানের কবর।
এ ব্যাপারে শহীদ এম এ হাফিজের স্ত্রী ৯৩ বছরের হালিমা হাফিজ জানান, দীর্ঘ সময় পর হলেও স্বামী ও সন্তানের কবরের সন্ধান পাই। শহীদ পরিবার হিসেবে আমার দাবি স্বাধীনতাযুদ্ধে যেসব মানুষ পাক সেনাদের হাতে শহীদ হয়েছে সেসব জায়গা চিহ্নিত করে সংরক্ষণ এবং শহীদদের তালিকা তৈরি ও পরিবারের সদস্যদের মর্যাদা দিতে হবে। তাহলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। এবং রাষ্ট্রও অনেকটা দায়মুক্ত হবে।
শুক্রবার তিনি তার সন্তানদের নিয়ে কবর জেয়ারত করেন ও উপস্থিতদের সামনে স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।