ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়া সরকারি সাত কলেজে সেশনজট নিরসন, ত্রুটিপূর্ণ ফল সংশোধন এবং ফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রতা দূর করাসহ সাত দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। সাত দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মানববন্ধন শুরু করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের এই মানববন্ধন নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।
এর পর সড়ক আটকিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এ সময় সাত কলেজের নানা সমস্যা তুলে ধরে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাবির অধিভুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ ৯ মাস সাত কলেজের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
তার পর মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচি সর্বশেষ সিদ্দিকের (তিতুমির কলের শিক্ষার্থী) চোঁখের বিনিময়ে ঢাবি আমাদের কার্যক্রম ধীরগতিতে শুরু করে। প্রায় দুই বছর দুই মাস অতিবাহিত হলেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কোনো সুফল ভোগ করতে পারছেন না।
শিক্ষার্থীদের দাবি, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। সবশেষ পরীক্ষায় ঢাকা কলেজ বাংলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ২১৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে সব বিষয়ে পাস করেছেন মাত্র ৩ জন। ক্যামেস্ট্রিতে ৪৮ জনের মধ্যে ৪০ জন অকৃতকার্য হয়েছেন।
অন্তর নামে সরকারি তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাবি আমাদের যে মান অনুযায়ী পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে, সেই মান অনুযায়ী ক্লাসে পড়ানো হয় না। এমনও বিষয় আছে- পাঁচটির বেশি ক্লাস হয় না। নানা অজুহাতে ক্লাস বন্ধ থাকে।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কলেজের শিক্ষকদের কাছে গেলে উনারা বলেন, ঢাবি তোমাদের সব কার্যক্রম করছে, আর ঢাবির প্রশাসনিক ভবনে গেলে বলে সাত কলেজের শিক্ষকরা সভা করে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এভাবেই শিক্ষাথীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।
সরকারি তিতুমীর কলেজের ২০১৫-১৬ সেশনের ব্যাবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল হাসান মত ও পথকে বলেন, আমরা ২০১১-১২ সেশনে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজে ভর্তি হয়েছি, ৮ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ কবে মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে পারব তা এখনো জানিনা। আমরা এখনো আমাদের সিলেবাস নিয়ে অন্ধকারে আছি, এখন পর্যন্ত ৩বার আমাদের সিলেবাস পরিবর্তন করা হয়েছে। ঢাবির অধিভুক্তি আমাদেরকে বিড়ম্বনা ছাড়া ভালো কিছু উপহার দিতে পারেনি। তাঁরা মানোন্নয়নের বদলে শিক্ষার্থীদের জীবনকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাদরে অবহেলার কারণে নতুন করে আরও ২ বছরের সেশন জটে পড়েছি।
২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখানে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে ক্যারিয়ার গোছাচ্ছেন, সেখানে একই সেশনের সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সম্মান শেষ বর্ষের পরীক্ষাই শেষ করতে পারেননি!
ঢাকা কলেজের ১৩-১৪ সেশনের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য হতাশার। শিক্ষাজীবনে কখনো কোথাও আটকাইনি। কোনো ক্লাসে ফেল নেই। কিন্তু উচ্চশিক্ষা নিতে এসে প্রায় দেড় বছরের জটিলতায় পড়ে গেছি। বন্ধুরা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা পিছিয়ে আছি। পরিবার থেকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, আর কতদূর? তখন সত্যিই মন খারাপ লাগে।’
দাবিগুলো হচ্ছে-
১. একসঙ্গে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ত্রুটিমুক্ত ফলাফল প্রকাশসহ একই বর্ষের সব বিভাগের ফলাফল একত্রে প্রকাশ
২. গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রকাশসহ খাতা পুনঃমূল্যায়ন
৩. সাত কলেজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন
৪. প্রতিটি বিভাগে মাসে দু’দিন করে অধিভুক্ত সাত কলেজে মোট ১৪ দিন ঢাবি শিক্ষকদের ক্লাস নেয়া
৫. সেশনজট নিরসনে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশসহ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু।