শ্রীলঙ্কায় শোক যেন শক্তিতে পরিণত হয়

মত ও পথ


উত্তর আমেরিকা থেকে শুরু করে আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার এমন দেশ খুব কম আছে যেখানে এক বা একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা হয়নি। আমরা রাষ্ট্রগুলোর কাছে জোর আবেদন জানাবো, যে করেই হোক সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একজন মানুষ যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে নিরাপদ না ভাবতে পারে তাহলে রাষ্ট্রগুলো সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যাবে। এর প্রতিকার প্রয়োজন। রাষ্ট্রগুলোকে সম্মিলিতভাবে এ ধরণের হামলা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমরা যখন শ্রীলঙ্কার ৩ চার্চ এবং ৩টি হোটেলে ভয়াবহ হামলার নিয়ে প্রতিক্রিয়া লিখছি, তখনও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। আজ ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩১০ জন এবং বহু আহত বলে বিভিন্ন অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ পাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে শ্রীলঙ্কা একটি নিরিহ দেশ। কারো সাতে-পাঁচে নেই। বিশেষ করে তামিলদের সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাত তথা জাতিয়তা প্রশ্নে এলটিটিই’কে দমন করার পর থেকে দেশটি শান্তিতেই বসবাস করে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ২১ এপ্রিল পরিকল্পিতভাবে পাঁচটি স্থানে ভয়াবহ ৬ টি বোমা হামলা চালায় কোনো একটি গোষ্ঠি। এই হামলার পেছনে কে বা কারা রয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে এটা যে একটি সন্ত্রাসী হামলা তা পরিস্কার। এই হামলা কারা ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত না হওয়া গেলেও একাধিক মুসলিম জঙ্গী সংগঠনের নাম উঠে এসেছে। শ্রী লঙ্কার পুলিশ প্রাথমিভাবে ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত নামে একটি সংগঠনের ব্যাপারে সন্দিহান। গত ১১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান এই ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত হামলা চালাতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছিলেন।

ঘটনা যারাই ঘটিয়ে থাকুক এটি একটি বর্বোরচিত কাজ এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেন নিরিহ মানুষের উপর এই হামলা? আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে একজন বন্ধুকধারী মসজিদে ঢুকে নির্বিচারে প্রর্থনারত মানুষের উপর গুলি চালিয়ে ৫২ জনকে হত্যা করেছে। এ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বহু এলাকায় এমন হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার হামলাটির মত এতটা বড় হামলা এবং মর্মোন্তদ মৃত্যু সত্যিই হৃদয় বিদারক। আমরা মত ও পথ পরিবার এই হামলায় গভীরভাবে মর্মাহত। সেই সঙ্গে নিতদের পরিবার পরিজনের প্রতি আমাদের সমবেদনা। শ্রীলঙ্কায় আজ থেকে তিনদিনের শোক পালিত হচ্ছে। আমরা আশা করি শ্রীলঙ্কাবাসীর এই শোক যেন শক্তিতে পরিণত হয়।

তবে শুধু সমবেদনা নয়, সেই সঙ্গে শান্তিকামী মানুষ ও দেশ নিয়ে আমাদের শক্তহাতে এই সন্ত্রাসের মোকাবেলা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আজ যে হামলা কলম্বো ও তার আপেশপাশে ঘটেছে তা যে বাংলাদেশের কোনো শহরে আগামীকাল ঘটবে না সে নিশ্চয়তা নেই। এই ধরণের নিরিহ মানুষের উপর হামলার ইতিহাস আজ নতুন নয়। উত্তর আমেরিকা থেকে শুরু করে আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার এমন দেশ খুব কম আছে যেখানে এক বা একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা হয়নি। আমরা রাষ্ট্রগুলোর কাছে জোর আবেদন জানাবো, যে করেই হোক সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একজন মানুষ যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে নিরাপদ না ভাবতে পারে তাহলে রাষ্ট্রগুলো সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যাবে। এর প্রতিকার প্রয়োজন। রাষ্ট্রগুলোকে সম্মিলিতভাবে এ ধরণের হামলা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে