বিদ্যালয় ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে চলছে ক্লাস। আকাশে সামান্য মেঘ দেখলেই ছুটি দিতে হচ্ছে স্কুল। এভাবেই চলছে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৫৬নং বুইচাকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ছাদ ও দেয়ালের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ার দুই মাস আগে ভবনটিতে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে বিদ্যালয়ের সামনে খোলা আকাশের নিচে ২শ’ শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পাঠদান করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়েল ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেক অভিভাবক সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এলাকায়ও আসতে দিতে চাইছেন না। এতে দিনে দিনে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
পুরো বিদ্যালয় ভবনের ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন অংশের পলেস্তার খসে পড়েছে। ফাটল ধরেছে ভবনের বিভিন্ন স্থানে। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষের ভেতরের মূল পিলারেরও পলেস্তার খসে পড়ে রড দেখা যাচ্ছে। ফলে ভবনটি যেকোন সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা শিক্ষক, অভিভাববক ও শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত। পরে ১৯৯৫-৯৬ সালে নির্মিত হয় স্কুল ভবন। কিন্তু এরপর ভবনটিতে আর কোনো সংস্কার হয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বিদ্যলয় ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বর্তমানে স্কুলটিতে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হচ্ছে। শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হাসিনা খানম বলেন, স্কুল ভবনটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোন সময়ে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের বাইরে খোলা মাঠে পাঠদান করা হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হলেও এখনো কোন ব্যবস্থা হয়নি। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রভাষক মনিরুজ্জামান বলেন, স্কুল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন সুফল পাওয় যায়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বলা হচ্ছে নতুন ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। কয়েকদিন আগে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার জন্য একটি কাঠের ঘর তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিকদার আতিকুর রহমান জুয়েল গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন করে বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এসেছে। সে আলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকায় এ বিদ্যালয়টি রয়েছে। তাছাড়া নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার জন্য ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সেখানে একটি কাঠের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।