খোশ আমদেদ মাহে রমজান

সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি
মাহে রমজান

রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে বিশ্ব মুমিন-মুসলমানের দ্বারে আবারও সমাগত সাম্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, মানবিকতা, ত্যাগ, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান। আমরা পুণ্যময় রমজানের এই শুভাগমনকে স্বাগত জানাই। খোশ আমদেদ মাহে রমজান, আহলান সাহলান মাহে রমজান।

মুসলমানদের জীবনে রমজান মাস আল্লাহ তায়ালার দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে। এই মাসের শবে কদরে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন যা সহ¯্র মাস হতে উত্তম। এই কারণেও এই মাসের মর্যাদা ও তাৎপর্য অপরিসীম।

রমজানের রোজা অনুভব করায় ক্ষুধার্ত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট। শিক্ষা দেয় মিতব্যয়িতার। ভোগ নয়, ত্যাগের আদর্শে আমাদের উদ্দীপ্ত করে। আল্লাহ তায়ালা সঠিকভাবে আমাদের রমজানের রোজা এবং যাবতীয় সুন্নাত ও নফল ইবাদত পালনের তাওফিক দিন। আমিন।

০২
রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া নিয়মিত ঘটনা। এই সময় বাজারদরের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যায়। অন্যদিকে লাভবান হয় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। পণ্য মজুদ, কৃত্রিম সংকট ও নানা অজুহাতে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে তারা সাধারণ মানুষের পকেট কেটে টাকা নিয়ে নেয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার প্রতিশ্রুতি থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ হয় না।

ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, এবারেও বাজার থাকবে অসাধু কিছু ব্যবসায়ীর কব্জায়। জানা গেছে চিনি, ছোলা, তেল, খেজুর, ডালসহ প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বড় মজুদই সুনির্দিষ্ট ঐ ব্যবসায়ীদের হাতে। অন্যান্য বছরের মত এবারও তাদের দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জানা গেছে, এরই মধ্যে দেশের অনেক অঞ্চলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনি, ছোলা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একবারে দাম না বাড়িয়ে রমজানের আগে ধাপে ধাপে দাম বাড়ানো হবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাজারে পণ্য সরবরাহ কম বলে অজুহাত দেখানো হচ্ছে। অথচ গুদামগুলো পণ্যে ঠাঁসা বলে গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে।

এমত অবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে, বরাবরের মত এবারও সংযম ও ত্যাগের মাস রমজানে তাদের জন্য দুঃসহ যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। রোজার মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রতিটি সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া এ মাসে অসৎ ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজরা প্রতি বছরই তৎপর হয়ে ওঠে। আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন চাঁদাবাজি। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে এবং নজরদারি বাড়াতে হবে। কেননা, ব্যবসায়ীদের মুনাফাখোরি মনোভাব এবং পরিবহন চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য কারণে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, এ কর্তব্য পালনে সরকার তার সাধ্যমতো চেষ্টা চালাবে।

সরকারকে মনে রাখতে হবে- এই পবিত্র মাসে রোজাদাররা ভোগান্তির সম্মুখীন হলে তাদের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পায়। সে কারণে রোজাদারদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে যারা ব্যবসা করার চক্রান্ত করছে তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। বাজার মনিটরিংয়ে হতে হবে আরও বেশি সক্রিয়। বিশেষ করে পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, ডাল, খেজুর ও ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট যাতে দানা বেঁধে না ওঠে সে ব্যাপারে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সাধারণ মানুষকে এমন হয়রানি থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই। বাজারে মনিটরিং বাড়ানো, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান, অনিয়ম প্রমাণিত হলে বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, নিত্যপণ্যের সরকারি মজুদ বাড়িয়ে তা ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ করা, মনিটরিং ব্যবস্থাপনায় কোনো অবহেলা বা দুর্নীতি হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, এক বাক্যে বলতে গেলে কঠোর বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সরকারের মনিটরিং কমিটির মধ্যে আন্তরিকতা, দক্ষতা ও সততা থাকলে অবশ্যই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জনগণের প্রতি দায়বোধ থেকে তারা সেটা করবে তা আমাদের প্রত্যাশা থাকলো।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে