ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কোনো এক সড়কে চেকপোস্টের দায়িত্বে ছিলেন।
রাত পৌনে ৯টার দিকে তার চেকপোস্ট থেকে একটু সামনেই মানুষের জটলা দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুলিশের এক উপপরিদর্শককে পাঠালেন ঘটনা কি তা দেখে আসার জন্য। এরপর যা ঘটল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। যা মত ও পথ-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
‘গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট। বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিঁচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।
একজন বলল, ‘স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল।’ পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বলল, ‘স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বলল, ‘স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল।’ আমার খটকা লাগল, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘দুধ’? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট।’ আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বলল, ‘স্যার, তিন মাস হলো চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।’
সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল। মনে হলো কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে। ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম।
সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বলল, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।
- বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দল পাকিস্তানকে হারাল
- নুসরাত হত্যা : ফেনীর এসপিও শাস্তির আওতায় আসছেন
- ১০ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৩০ কোটি ডলার
আজ আমাদের দেশের এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে…। কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। হয়ত আমি ভালো চাকরি করে আজ ভালো আছি। কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মতো নিরুপায়। এর দায়ভার কার?!!’