রোববার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইআরডি সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশে চাল আমদানি বন্ধ করা হবে এবং ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রফতানি করা হবে।
এ সময় আগামী ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে কৃষি ও এর উপখাতগুলোতে সরকারের বরাদ্দ ও বিশেষ গুরুত্ব প্রস্তাব হিসেবে অর্থমন্ত্রীর কাছে সুপারিশমালা প্রদান করেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর আনইউজুয়ালি আমরা অনেক বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পেরেছি। আমাদের যেমন বেশি উৎপাদন হয়েছে, আশপাশের দেশেও তেমনি করে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে। বাইরে যদি ডিমান্ড (চাহিদা) থাকত, আমরা রফতানি করতাম। বাইরেও চাহিদা নাই।’
তারপরও দেশের কৃষকদের বাঁচাতে চাল আমদানি বন্ধ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের কৃষককে বাঁচাতে হবে। আমরা সরকার থেকে যেটা করতে পারি, সেটা হলো আমরা আমদানি রেস্ট্রিক্ট (বন্ধ) করতে পারি। সরকারিভাবে আমরা এই কাজটি করব। অবশ্যই রেস্ট্রিক্ট করব। আমরা তো এটা ব্যান্ড করে দিতে পারব না।’
‘আমার মন্ত্রণালয় থেকে যা যা করা দরকার, সেগুলোর প্রতিফলন আপনারা দেখতে পাবেন’, যোগ করেন অর্থমন্ত্রী। তার বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টা অবশ্যই সুবিবেচনা করবেন। এটি তার মন্ত্রণালয়েরই কাজ।
- আরও পড়ুন >> রূপপুর প্রকল্পে অস্বাভাবিক খরচ তদন্তে কমিটি
ভর্তুকি দিয়ে শবজি রফতানি করায় সবজির উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবজি অনেক হচ্ছিল। কৃষকরা দাম পাচ্ছিল না এবং এগুলা পচে যাচ্ছিল। আমরা রফতানির ব্যবস্থা করলাম। রফতানি খরচ দিতে পারে না বলে আমরা সেখানে ভর্তুকি দিচ্ছি। ভর্তুকি দিয়ে আমরা সেই কাজটি করছি। এর কারণে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন চার নম্বরে। রফতানি করার কারণে এর বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। সবজিতে অন্তত দামটা পাচ্ছে কৃষকরা।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছর ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে। কিন্তু এখন চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেও কম। চালও প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে রফতানি করতে পারি। সেই উদ্যোগটাও আমরা গ্রহণ করব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করব।’
শুধু সবজি নয়, যে বছর যে পণ্য বেশি উৎপাদন হবে, সেগুলোও রফতানি করা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। তার মতে, ‘তাহলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে মিসম্যাচটা (ব্যবধান) হবে না। ন্যায্য দামটা কৃষক পাবেন।’
মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘উৎপাদন করে তারা যদি উৎপাদনের খরচ না পায়, তাহলে একদিকে তারা নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে আমরা মনে করি, এটি সরকারের জন্য একটি অনৈতিক বিষয়। সরকারকে সবদিকেই দেখতে হবে, উৎপাদনও দেখতে হবে, উৎপাদনের জন্য সহায়ক যা আছে, এগুলোরও সমাধান দিতে হবে। এটা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। আমি মনে করি, এটা অবশ্যই করণীয়।’
কৃষি যন্ত্রপাতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, আমরা যে কৃষি যন্ত্রপাতিগুলো দিই, সেগুলো নিতেও চায় না। আমরা অনেক ভতুর্কি দিয়ে দিতে চাই। জোর করে দেয়া লাগে। সবাইকে অবহিত করতে হবে, যদি কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন, তাহলে উৎপাদন বাড়বে। ব্যয়ও কমে যাবে। এই ব্যয় কমানোর জন্যও আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা আগামীতে যে কাজটি করব, উৎপাদন হোক আর না হোক, আমরা সয়লাভ করে দেব কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য। কৃষি যন্ত্রপাতি আমরা নিয়ে এসে রেখে দেব। যখন লাগবে তখন ব্যবহার করব। কিন্তু ব্যবহার করতে হবে। আর সরকার এখান থেকে নামমাত্রে দাম নেয়।