চলতি বছর ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে সারাদেশের প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। মোবাইল ফোন থেকে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে এসব আবেদন করা হয়েছে। পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জ করে এটি রেকর্ড সংখ্যক আবেদন বলে জানা গেছে। বুধবার দশটি বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। গত ৬ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার দশটি বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৫৮ হাজার ৭০, বরিশালে সাড়ে ৮ হাজার ৪৮০, চট্টগ্রামে ১৯ হাজার ১৮৩টি, দিনাজপুরে ১২ হাজার ৫৪০, রাজশাহীতে ১৫ হাজার ১৭৩, সিলেটে ১০ হাজার ৫৪১টি, মাদ্রাসায় ১১ হাজার ৭৪৫ জন পরীক্ষার্থী আবেদন করেছে খাতা পুনঃনিরীক্ষার জন্য। অপরদিকে এক-একজন শিক্ষার্থী একাধিক বিষয়ের ফল চ্যালেঞ্জের কারণে উত্তরপত্রের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯১১টিতে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯২৩টি, বরিশালে সাড়ে ১৫ হাজার ৫২৭, চট্টগ্রামে ৪৪ হাজার ২৯৭টি, দিনাজপুরে ২৬ হাজার ৯২৫, রাজশাহীতে ৩০ হাজার ২৩১, সিলেটে ১৮ হাজার ৯১০টি, মাদ্রাসায় ২৩ হাজার ৭২৪টি পত্রের খাতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার দশ বোর্ডে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৯ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজসহ দেশসেরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীও আছে। বেশিরভাগ আবেদন পড়েছে ইংরেজি-গণিত বিষয়ে। আছে ধর্মও। ১২টি পত্রের মধ্যে এভাবে শিক্ষার্থীর সর্বনিম্ন দুটি থেকে সর্বোচ্চ ৪-৫টি পত্র চ্যালেঞ্জ করার রেকর্ডও রয়েছে। ঢাকা বোর্ডে সবচেয়ে বেশি পড়েছে গণিত বিষয়ের খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন, ২২ হাজার ১৫০টি। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ধর্ম বিষয়ের খাতা, ১৫ হাজার আর তৃতীয় স্থানে আছে ইংরেজি প্রথমপত্রের খাতা, ১২ হাজার ৭০০টি। রাজশাহী বোর্ডে সাড়ে ৬ হাজার পরীক্ষার্থী গণিত, ৩ হাজার ৬ জন রসায়ন, ২ হাজার ৩১২ জন ইংরেজি প্রথমপত্র এবং ২ হাজার ৯৭৮ জন ধর্ম বিষয়ের খাতা পুনর্মূল্যায়ন চেয়েছে। এভাবে অন্যান্য বোর্ডে গণিত, ইংরেজি এবং ধর্ম বিষয়ের ফল নিয়ে বেশি অসন্তোষ শিক্ষার্থীদের।
বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, পাবলিক পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষার ক্ষেত্রে সবক’টি উত্তরে নম্বর দেওয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে (কম্পিউটারে ফল প্রণয়নে পাঠযোগ্য ফরম) উত্তোলনে ভুল হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা এসব বিষয় দেখা হয়। তবে সেই খাতায় নতুন করে কখনো নম্বর দেওয়া হয় না। গত ৬ মে ফল প্রকাশের পরদিনই শুরু হয় খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন প্রক্রিয়া। চলে ১৩ মে পর্যন্ত। আবেদনকারীরা ফল জানতে পারবে আগামী ২ জুনের মধ্যে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, বরাবরের মতো অনেক পরীক্ষার্থী নিজেদের ফলে সন্তুষ্ট না হয়ে পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন। নিময় অনুযায়ী এসব খাতা নতুনভাবে নিরীক্ষা করা হবে।
তিনি বলেন, যারা এক বা দুই নম্বর কম পাওয়ায় জিপিএ-৫ পাননি তারা আবেদন করে। তবে অনেক সময় কৌতুহলীও কেউ কেউ আবেদন করে থাকে। তবে এবার ইসলাম ধর্ম বিষয়ের ফলে আপত্তি জানিয়ে বেশি আবেদন জমা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।