আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে ১০ উন্নয়ন কর্মসূচি। এর মধ্যে ৭টি প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ৩৬ হাজার ২২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং স্বপ্নের প্রকল্প পদ্মা সেতু। আগামী ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও ২০২০-২১ অর্থবছরের আগেই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ডিসেম্বরের মধ্যে মূল সেতুর প্রায় পুরোটা দৃশ্যমান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ধরনের আরো ৯টি প্রকল্প রয়েছে যেগুলো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এসব প্রকল্প বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বাজেটে মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে অবকাঠামোর আলাদা বইয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পের ব্যাপারে বিস্তরিত তথ্য থাকবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
মোট ১০টি প্রকল্প অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো দেশের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চলতি অর্থবছরেও এসব প্রকল্পে জোর দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে এগুলো পাচ্ছে বাড়তি তাৎপর্য।
আসন্ন বাজেটে পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল প্রকল্প), দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছাকাছি ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন দ্বৈতগেজ রেলপথ, পায়রাবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে থাকছে বড় বরাদ্দ।
এসব প্রকল্পে সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার ২১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ বরাদ্দের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র:
বাংলাদেশের ইতিহাসে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। তাই বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্বও পাচ্ছে প্রকল্পটি। আসন্ন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১৪ হাজার ৯৮০ কোটি সাত লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১১ হাজার ৩১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। রাশিয়ার অর্থায়নে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। জানুয়ারি পর্যন্ত এর আর্থিক অগ্রগতি ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ :
২০১৬ সালে অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে খুলনা পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হবে।
আসন্ন বাজেটে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে তিন হাজার ৯৯৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে তিন হাজার ২৯০ কোটি টাকা। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
পদ্মা সেতু প্রকল্প :
বর্তমান সরকারের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রকল্প। আগামী ডিসেম্বরের আগে এটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে না। তবে প্রল্পটির কাজ খুবই দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। আগামী বাজেটে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর এতে বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। গত জানুয়ারি পর্যন্ত পদ্মা সেতুর প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ।
মেট্রোরেল প্রকল্প :
নগরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে সরকার রাজধানী ঢাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জোরেশোরে এর কাজ এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ হবে। প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবে। আসন্ন বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে সাত হাজার ২১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার ৪৮৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র :
এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তিন হাজার ৫৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।
দোহাজারী-কক্সবাজার, রামু-ঘুনধুম রেলপথ :
আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এক হাজার ১০৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ২০ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি ১৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর :
২০১৫ সালে তিন হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ফার্স্ট ট্র্যাক কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত এ প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫৫২ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি ৩৮ দশমিক ১৮ শতাংশ।
- আরও পড়ুন >> মোদির সাফল্যের মূলে পাকিস্তানে বিমান হামলা!
- আরও পড়ুন >> বিএনপির নারী এমপি রুমিন ফারহানা টকশোর পরিচিত মুখ
- আরও পড়ুন >> বাজেটে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টিতে থাকছে প্রণোদনা