ভয়ভীতি উপেক্ষা করেই মধ্যরাতে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফাতেমা বেগম । কিছুটা ভুতুড়ে পরিবেশেই বুধবার রাত ৩টার রাজধানীর ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে সেহরির সময়ে অনেকের সঙ্গে লাইনে দাঁড়ান ফাতেমা।
পরদিন সকাল সোয়া ১০টায় তিনি জানতে পারেন টিকিট শেষ। তখনও তার পেছনে লাইনে কয়েক শ’ লোক। ফাতেমা টিকিট না পেলেও দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা লাইনে থাকার সময় আশপাশের ছেলেদের নানা টিপ্পনি, অশ্লীল সব অঙ্গভঙ্গি হজম করতে হয়েছে।কমলাপুরসহ বাকি স্টেশনেও একই দশা। জানতে চাইলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, কাউন্টারে সীমিত টিকিটের বিপরীতে ৪-৫ গুণ যাত্রী। অ্যাপসে প্রতিদিন ১১ হাজার ১৪৫টি টিকিটের বিপরীতে পৌনে ৩ লাখ লোক ঢোকার চেষ্টা করছে।
সর্বত্রই একটা জট তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হলেও আজ ২ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। রেলওয়ে বাণিজ্যিক বিভাগ বলছে, ঈদ উপলক্ষে দিনে প্রায় ২৭ হাজার টিকিট বিক্রি হচ্ছে।আর টিকিট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত- সিএনএস বলছে, দিনে ৩১ হাজার ৩৮০টি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে অ্যাপসে ১১ হাজার ১৪৫টি এবং বাকি ২০ হাজার ২৩৪টি কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে।
তবে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার বলছেন, দিনে ২৫ হাজার ৫৭১টি টিকিট বিক্রির জন্য বরাদ্দ আছে। যার ৫০ শতাংশ (১২ হাজার ৭৪৮) রাজধানীর ৫টি স্টেশনের ৩৬টি কাউন্টার থেকে বিক্রর কথা। ‘সোনার হরিণ’ নামক টিকিটের সংখ্যা নিয়ে দায়িত্বশীলদের এমন ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে টিকিট প্রত্যাশীদের মধ্যে। কমলাপুর স্টেশনে ২০টি কাউন্টারের মধ্যে ‘মহিলা ও প্রতিবন্ধী’ কাউন্টার আছে একটি।
ওই কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা গেল লম্বা লাইন। আঁকাবাঁকা হয়ে স্টেশন চত্বরের সড়ক পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে লাইনটি। তবে এই লাইনের টিকিট প্রত্যাশীদের ৮৫ ভাগই কাঙ্খিত টিকিট পাননি।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক জুয়েল জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কাউন্টার থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে। কমলাপুরসহ ৫টি স্টেশনে ১২ হাজার ৭৪৮টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। ফুলবাড়িয়া স্টেশনে দ্রুত সময়ের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কেননা ওই স্টেশনের জন্য দিনে বরাদ্দ ৬৪৭টি টিকিট। এই সংখ্যক টিকিটের জন্য ৩-৪ হাজার যাত্রী লাইনে দাঁড়ায়। অপরদিকে কমলাপুর স্টেশনের ২০টি কাউন্টার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টিকিট নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১৮-২০ হাজার যাত্রী।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, স্টেশনে গিয়ে কেউ টিকিট কাটতে পারেননি, এমন অভিযোগটি সঠিক নয়। কেউ না কেউ তো টিকিট কেটে নিচ্ছেন। যারা টিকিট কাটতে পারছেন না, সেই ব্যর্থতা তো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নেবে না। অনেক যাত্রীর অভিযোগ, যে সংখ্যক টিকিট ছাড়ার কথা বলা হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে তা ছাড়া হচ্ছে না।
টিকিট নিয়ে কোথাও না কোথাও লুকোচুরি হচ্ছে। নির্ধারিত লোকদের জন্য টিকিট ব্লক করে রাখার অভিযোগও রয়েছে।
অ্যাপসে টিকিট কাটতে না পারার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিএনএস লিমিটেডের কর্মকর্তা শামিম আহম্মেদ বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কাউন্টার থেকে ১০ হাজার ১৪৭টি এবং অ্যাপসে ৮ হাজার ৬২৭টি টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। অনলাইনে বরাদ্দ প্রায় ১১ হাজার টিকিটের বিপরীতে ঢোকার চেষ্টা করছে প্রায় পৌনে তিন লাখ গ্রাহক। এর মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ যাত্রী টিকিট কিনতে পারছেন।
সিএনএস কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্য মানতে রাজি নন সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলছেন, কাউন্টার থেকে ২০ হাজার ২৩৪টি এবং অ্যাপসে ১১ হাজার ১৪৫টি টিকিট বিক্রির কথা। সেটা হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান জানান, সীমিত টিকিট দিয়ে হাজার হাজার যাত্রীর চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়।
আমরা প্রতিবছরই অতিরিক্ত যাত্রী বহনে ঈদ স্পেশাল ট্রেন ও অতিরিক্ত যাত্রীবাহী কোচ রেলওয়ের বহরে যোগ করি। টিকিট কাটতে না পারার যে অভিযোগ তা সত্য নয়। বিশেষ করে কাউন্টার থেকে যারা টিকিট কাটতে পারছেন না, সেটা রেল কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যর্থতা নয়।
টিকিট সবাই পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। অ্যাপস বিষয়ে তিনি বলেন, অ্যাপসটি নতুন তৈরি হয়েছে। একই সময়ে হাজার হাজার লোক অ্যাপসটিতে ঢোকার চেষ্টা করায় কিছুটা ধীরগতি হয়। অ্যাপসে যে প্রতিদিন টিকিট বিক্রি করছে তার তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে।