বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে– এমন অভিযোগ করে বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। কারও সাহায্য ছাড়া তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। চিকিৎসা না দিয়ে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
আজ শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং আমার কাছে তথ্য আছে, তিনি ইনসুলিন নিচ্ছেন। ইনসুলিন নেওয়ার পরেও তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সুগার লেভেল ১০ থেকে ১৬ তে ওঠা-নামা করে। তার এই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে পরিণতি কী হতে পারে, তা সবাই জানি।
ফখরুল বলেন, চিকিৎসা না হলে পরিণতি কী হতে পারে, সেদিকেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। আগে তার বাঁ কাঁধ ফ্রোজেন ছিল, এখন ডান কাঁধ ফ্রোজেন হয়ে যাচ্ছে। হাত-পা নাড়াতে পারছেন না। কোনো সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। সরকারের কাছে বারবার বলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিষয়টি যেভাবে জাতির সামনে আসা দরকার, সেভাবে আসছে না।
খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা দিয়ে তাকে সরকার কারাগারে আটকে রাখতে চাইছে– এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত বৃহস্পতিবার আপনারা দেখেছেন যে, খালেদা জিয়ার দুটি মামলায় জামিনের বিষয়ে কীভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ধরনের মামলায় সঙ্গে সঙ্গে জামিন হওয়ার কথা ছিল। সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রথমে বললেন, উনি অসুস্থ। আবার পরে বললেন, উনি আরেকটা কাজে ব্যস্ত। সেখানেও সরকার ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে।
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার আইনগত যে প্রাপ্যতা, তা সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিলম্বিত করছে। আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা আইনের শাসনের বিরোধী। এটা অমানবিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে নিয়মিত জানানো হচ্ছে না এবং স্বজনদের সঙ্গে ২০-২৫ দিনেও দেখা করতে দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, দলীয় নেতাদের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হয় না। খালেদা জিয়ার জামিন প্রাপ্য। নাজমুল হুদা, আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী আছেন, যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার বেলায় কেন এমন হচ্ছে? তার মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি পেলে তাঁর সুচিকিৎসা করা সম্ভব।
- ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে’
- ভারতে বিজেপির জয়ে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের
খালেদার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সরকার দায়ী থাকবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা কি কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলতে চায়? হত্যা করতে চায়? এত দুর্বলতা কেন? নিজেদের প্রতি আস্থা নেই কেন? কারণ তারা জানে, জনগণের কোনো সমর্থন তাদের নেই।
বিএনপির সদস্যদের সংসদে যাওয়ার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির সম্পর্ক নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে তারা সংসদে গেছেন। এর সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি কোনো শর্ত দিয়ে হবে না, এটি আইনগতভাবে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা তো বটেই। তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেওয়ার কারণে তাকে যদি জেলে থাকতে হয়, তাহলে তো তিনি মুক্তিযোদ্ধাই হন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী ও আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।