‘সভ্য সরকার হলে এত দিনে তারা পদত্যাগ করতেন’

ডেস্ক রিপোর্ট

রিজভীর সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারায় এবং অভাবের কারণে সম্প্রতিকালে কয়েকটি জায়গায় বাবা-মা কর্তৃক সন্তান হত্যার জন্য কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি জানান, অভাবের তাড়নায় যশোরের শার্শা উপজেলার চালিতাবাড়িয়া দীঘা গ্রামে রোববার (২৬ মে) রাতে দুই শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর এক মা আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া শনিবার (২৫ মে) অভাবের কাছে হার মেনে নরসিংদীতে দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন এক বাবা। অভাবে জর্জরিত হয়ে গত এক সপ্তাহে নয় জনের আত্মহত্যা বা অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

‘পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে সরকারি দলের নেতা-কর্মীসহ অন্তত ৬ লাখ লোক বিদেশে যাচ্ছে ঈদ করতে। আগে ঈদ করতে মানুষ যেত গ্রামের বাড়িতে। সম্পদ বণ্টনের এই অসাম্য এবং দুর্নীতি করার অবারিত ব্যবস্থার জন্য দেশে এক লুটেরা গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। অন্যদিকে মানুষ অভাবের কারণে করছে আত্মহত্যা। ধানের দাম না পেয়ে কৃষকরা ক্ষেতে আগুণ দিচ্ছে, মহাসড়কে ধান ঢেলে দিচ্ছে’—অভিযোগ রিজভীর।

তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ অনির্বাচিত সরকারের লোকজন একদিকে লুটপাট করে অর্থনীতি ফোকলা করে দিচ্ছে। অন্যদিকে অভাবের তাড়নায় হতদরিদ্র মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সারাদেশে দরিদ্র মানুষের এখন করুণ দশা। অথচ সরকার বলছে দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।’

দেশে ভয়াবহ অবস্থা চলছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলায় দেবখণ্ড গ্রামে অল্প জমির মালিক মরিয়ম বেগম টেলিভিশন বিক্রি করে ধান কাটার মুজুরি পরিশোধ করেছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না থাকায় চারদিকে দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য, অস্বস্তি, ক্ষুধা ও হাহাকার। এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই সরকারের। প্রতিদিনই কৃষকের মনে অন্ধকার ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে। সরকারের নীতির কারণে ক্ষুধা, হাহাকার, অনাহার ও অর্ধাহারে মানুষের জীবন বিপন্ন।’

কৃষিক্ষেত্রে এই অরাজকতার জন্য কৃষিমন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। কোনো সভ্য সরকার হলে এত দিনে কৃষিমন্ত্রী পদত্যাগ করতেন। সরকারকে বলব জোর জবরদস্তি করে ক্ষমতায় থেকে দেশের জনগণের ওপর আর জুলুম করবেন না। অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। জনগণকে বাঁচতে দিন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সোমবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী ও খাদ্যে ভেজালকারীরা সমাজের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগে ভেজাল ঢুকে গেছে। বিএনপিকে বলব অগণতান্ত্রিক আন্দোলন না করে, খাদ্যে ভেজাল ও মাদক নির্মূলে আন্দোলন করুন। আমরা আপনাদের ধন্যবাদ জানাব।’

মোহাম্মদ নাসিমের এ বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘নাসিমসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-নেতার কথাবার্তায় মনে হয়, তারা নিজেদের পদ খুইয়ে হতাশায় ভুগছেন। শুধুই বিএনপিকে উপদেশ দিচ্ছেন। আমার মনে হয় তারা মন্ত্রীত্ব হারিয়ে বিএনপির কনসালটেন্ট হতে চাচ্ছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক শাহিদা রফিক, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুসহ অনেকে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে