রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের বরাদ্দের টাকায় নির্মাণ হচ্ছে রাস্তা। কমবে চলাচলের ভোগান্তি। তবে নাখোশ স্থানীয়রা। অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্য। কারণ, রাস্তার মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই চলছে কাজ। ফলে সেখান দিয়ে চলাচল ঝামেলার হবে-এটা বুঝতে পারছে এলাকাবাসী। আবার সেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।
আরও অদ্ভুত শোনাবে, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসি বলছে, মাসদুয়েক পরে এই খুঁটিগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। তবে ততদিনে রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। এলাকাবাসী বলছে, তখন খুঁটি সরানোর সময় যে গর্ত তৈরি হবে, সেগুলো মেরামত হবে না। আর সেখান থেকে সড়কটি আবার ভাঙবে। আবার সদ্য নির্মাণ করা পাকা রাস্তা ভেঙে খুঁটি তুলে, খুঁটির জায়গা আবার ঢালাই করলেও রাস্তা টেকসই হবে কি না, এই বিষয়টি নিয়েও আছে প্রশ্ন।
রাজধানীর মাতুয়াইলে ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে শহীদ মোজাফফর লেন থেকে উত্তর পাড়ার শেষ মাথা পর্যন্ত এবং স্কুল গলি থেকে কবরস্থানের শেষ মাথা পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে এই সড়ক। সড়কের প্রায় মাঝ বরাবর একটি দুটি নয়, আছে ৩০ থেকে ৪০টি খুঁটি।
- আরও পড়ুন>> ওসি মোয়াজ্জেমের হাজিরার দিন আজ
মে মাসের শেষ দিকে ঈদের আগে এভাবে খুঁটি রেখে সড়ক নির্মাণ নিয়ে আপত্তি জানায় এলাকাবাসী। এই বিষয়টির পাশাপাশি নিম্নমানের কাজের অভিযোগ এনে স্থানীয়দের বাঁধার মুখে বন্ধ হয় কাজ। ঈদের পর নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে আবার শুরু হয় রাস্তা তৈরির কাজ।
তখন রাস্তার মাঝখানে খুঁটি রেখে নির্মাণ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম খান। কিন্তু কথা রাখতে পারেননি তিনি।
এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘আমি বাধা দিয়েছিলাম। কন্ট্রাক্টর (ঠিকাদার) পিডিকে (প্রকল্প পরিচালক) বলেছে। পিডি (কাজী বোরহান উদ্দিন) আমাকে ডেনে নিয়ে বললেন, আগস্টের ১৫ তারিখের মধ্যে ডিপিডিসি সব খাম্বা তুলে দেবে।’
তবে সড়ক নির্মাণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবার খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়টি স্থানীয়রা ভালোভাবে নেননি। তাদের মতে, তখন খুঁটি তুলে নেয়া হলে সে জায়গাগুলোতে রাস্তা দুর্বল হয়ে পড়বে। আর এ কারণে সড়কটি ভেঙে যাবে সহজেই।
মুন্সি বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, ‘রাস্তার মাঝের পিলার না সরিয়েই ঢালাই দিচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে রাতে মাটির গাড়ি চলে। এতে খুঁটির সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার আশঙ্কা খুবই বেশি। বড় কোনো দুর্ঘটনা গলে কে দায়ভার নেবে?’
রাস্তার নির্মাণ কাজও নিয়েও আপত্তি আছে প্রবীণ এই মানুষটির। বলেন, ‘ঢালাইয়ের দুই দিনের মাথায় যখন মানুষ চলাচলের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত করা হয় মানুষের পায়ের চাপে রাস্তার ধারে ফাটল ধরেছে। ভারী যানবাহন চললে এই রাস্তা তো দুই মাসও টিকবে না। আমি আমার জীবনে এত নিম্নমানের কাজ এর আগে দেখিনি।’
সড়কটি নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববন্ধু আন্তর্জাতিক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ওমর ফারুক খান মুকুল জানান, সড়কের মধ্যে থাকা খুঁটিগুলো পরে তুলে নেয়া হবে, তাকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর তিনি সে অনুযায়ী কাজ করছেন।
তবে সব কাজ এক সাথে শেষ করতে পারলে সড়কটি তুলনামূলক বেশি টেকসই হতো বলে মনে করেন এই ঠিকাদার নিজেও। বলেন, খুঁটিগুলো সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ডিপিডিসিকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়াও এরমধ্যে শেষ হয়েছে। কিন্তু সংস্থাটির ধীর গতির কারণে সড়কের মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই তিনি ধালাই করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাস্তাটি নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে এ বিষয়ে নগর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালক কাজী বোরহান উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে কল করলেও কেউ ফোন ধরেননি। ফলে তাদের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।