আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে শনিবার আইসিসি প্রতিনিধিদল নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন।
তবে এসময় কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করেন প্রতিনিধিদল। তারা কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে কাছে আসতে দেননি। পাশাপাশি সঙ্গে থাকা প্রশাসনের কর্মকর্তা কিংবা কথা বলা কোনো রোহিঙ্গাদেরও ছবি তুলতে দেননি। বিকেলে তারা কক্সবাজার ফিরে যান।
আজ রোববার কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তার (আরআরআরসি) সঙ্গে তাদের বৈঠক হবার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে ক্যাম্প সূত্র।
সূত্র মতে, শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার পৌঁছান আইসিসি প্রতিনিধি দল। কক্সবাজারে রাত্রীযাপনের পর সকালে গাড়ি যোগে কুতুপালং ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান প্রতিনিধি দল।
ওখানে ক্যাম্প ইনচার্জ ওবাইদুল্লাহ’র কার্যালয়ে ক্যাম্প ও উপজেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেন তারা। সেখান থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেন।
সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাগণ কোনো কথা বলতে না চাইলেও, কথা বলা রোহিঙ্গা নেতারা জানান, আইসিসি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গারা কেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে জানতে চান।
এ সময় রোহিঙ্গারা জানান, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের পুলিশ ক্যাম্পে সংগঠিত একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী, বিজিপি, রাখাইন সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের উপর চরম নির্যাতন চালায়।
রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ, গণহত্যা, গুম, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে। সন্তানদের সামনে বাবা-মা, মা-বাবার সামনে সন্তানকে নির্বিচারে কুপিয়ে, আগুনে পুড়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে আইসিসি প্রতিনিধি দল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু কোনার পাড়ায় শূন্য রেখায় অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখতে যান। সেখানে আইসিসি প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
তিনি জানান, মিয়ানমার তাদের উপর চরম নিপীড়ন, গণহত্যা ও অত্যাচার নির্যাতন করেছে। এ সময় বাড়ি-ঘরে লুটপাট শিশুদের আগুনে পুড়ে মেরেছে নরপিশাচের দল।
আইসিসি প্রতিনিধি দলকে উদ্দেশ্য করে দিল মোহাম্মদ বলেন, আমরা বাংলাদেশের বোঝা হয়ে আর থাকতে চাই না। নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে নিজেদের বসতি গড়তে চাই।
ক্যাম্প সূত্র জানায়, উভয় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের কথা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন আইসিসি প্রতিনিধি দল। ক্যাম্প পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে উখিয়া থানা পুলিশের ওসি মো. আবুল মনছুর, ক্যাম্প ইনচার্জ ওবাইদুল্লাহসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) মো. আবুল কালাম জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কিনা এটি নিশ্চিত হতে তদন্তে নেমেছে আইসিসি।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আইসিসির ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়াটের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও তাদের সঙ্গে কথা বলতে কক্সবাজারের উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কোনারপাড়া শূন্য রেখায় যান। অভিযুক্ত মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করতে আইসিসি প্রতিনিধি দল সেখানে রোহিঙ্গা নরনারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে আইসিসি প্রতিনিধি দলের কক্সবাজার সফর নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিনিধি দলের প্রধানের নাম জানানো হলেও কারা কারা রয়েছেন সেটাও গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়নি।