তবে কী কাশ্মীরের মুসলিমপ্রধান চরিত্র বদলাতেই ৩৭০ ধারা বিলোপ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

কাশ্মীর
কাশ্মীর

ভারত নিয়ন্ত্রিত মুসলিমপ্রধান রাজ্য কাশ্মীরের ‘ডেমোগ্রাফি’ বা জনসংখ্যাগত চরিত্র বদলে দেয়াই সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পেছনে আসল উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বা তাদের পুরনো অবতার জনসঙ্ঘ অবশ্য বহু বছর ধরেই ভারতীয় সংবিধানের ওই বহুল আলোচিত ধারাটি বিলোপ করার দাবি জানিয়ে আসছিল। খবর বিবিসির।

স্বাধীনতার সাত দশক পর ভারতে একটি বিজেপি সরকার অবশেষে তাদের এই বহু পুরনো রাজনৈতিক এজেন্ডাটি বাস্তবায়ন করল।

বিজেপির বক্তব্য ছিল- কাশ্মীর যাতে সম্পূর্ণভাবে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত বা ‘আত্মীকৃত’ হতে পারে, সে জন্যই এ ধারাটি বিলোপ করা দরকার।

কিন্তু সোমবার পার্লামেন্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নাটকীয় ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বুঝিয়ে দেয়, তারা এই পদক্ষেপের মধ্যে অন্য অভিসন্ধি দেখছে।

রাজ্যসভায় বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা গুলাম নবি আজাদ তৃণমূলসহ অন্য সব দলকে পাশে নিয়ে ঘোষণা করে, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিকভাবে কাশ্মীরের যে অনন্য চরিত্র, কলমের এক খোঁচায় বিজেপি সেটিই বরবাদ করে দিতে চাইছে।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে- সীমান্তবর্তী রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর এমন একটি প্রদেশ, যার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, রাজনীতি সবই বাকি দেশের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।

এই রাজ্যের লাদাখে বৌদ্ধ ও মুসলিমরা থাকেন, কাশ্মীরে থাকেন মুসলিম পণ্ডিত ও শিখরা। আর জম্মুতে জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ হিন্দু, আর বাকি ৪০ শতাংশ মুসলিম।

এমন একটি রাজ্যকে যদি কেউ এক সূত্রে বেঁধে রাখতে পারে, সেটি ছিল সংবিধানের ৩৭০ ধারা। এ ধারায় রাজ্যের সব ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতির মানুষের জন্যই বিশেষ ব্যবস্থা ছিল, যা আজ বিজেপি শেষ করে দিল।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী যে কথাটি কিছুটা রাখঢাক করে বলেছেন, কাশ্মীরি অ্যাক্টিভিস্টরা সেটিই বলছেন আরও খোলাখুলি- যে এর মাধ্যমে কাশ্মীর উপত্যকা বা ভ্যালির ডেমোগ্রাফি বদলে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

কাশ্মীরের বারামুলা কলেজে একসময় অধ্যাপনা করেছেন নাজির আহমেদ শল, কাশ্মীরিদের ‘সেলফ ডিটারমিনেশন’ বা আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিতে তিনি গত বহু বছর ধরে লন্ডনে আন্দোলন চালাচ্ছেন।

লন্ডনভিত্তিক জাস্টিস ফাউন্ডেশনের কর্ণধার অধ্যাপক শল বলছিলেন, ৩৭০ ধারা বিলোপের আগেই অন্তত দুটি পদক্ষেপ থেকেই পরিষ্কার আঁচ করা যাচ্ছিল বিজেপি সরকার কাশ্মীরের আবহমান কালের চরিত্রটা পাল্টে দিতে চাইছে।

প্রথমত ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল কাশ্মীরের জন্য যে ‘ডোভাল ডকট্রিন’ ফর্মুলেট করেছিলেন তার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাই ছিল ভারতের অন্য অংশ থেকে লোকজনকে কাশ্মীরে এনে বসত করানো।

কাশ্মীরে হিন্দু পণ্ডিতদের জন্য আলাদা কলোনি স্থাপন, কাশ্মীরে শিল্পাঞ্চলের জন্য বাকি ভারত থেকে শিল্প শ্রমিকদের এনে বসতি গড়া কিংবা ভারতীয় সাবেক সেনা সদস্যদের এনে কাশ্মীরে জমি দেয়ার কথা আগে থেকেই বলা হচ্ছিল।

জনমনে প্রশ্ন, তবে কী কাশ্মীরের মুসলিমপ্রধান চরিত্র বদলাতেই ৩৭০ ধারা বিলোপ?

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে