পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয় এ উৎসব। ঈদুল আজহা কোরবানির ঈদ হিসেবেও পরিচিত। কোরবানি শব্দটির অর্থ ত্যাগ ও নৈকট্য। মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও মানবকল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করাই মূলত ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের তাৎপর্য।
আগস্ট মাস সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য একটি শোকাহত মাস। বেদনাবিধুর এক হত্যকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে এই দুনিযা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু বাঙালির প্রিয়তম মানুষদের একজন সুতরাং একদিকে বলা যায় বাঙালি সেদিন একটি বড় ধরনের বিসর্জন দিয়ে ছিল।
অনুরুপভাবে আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর প্রিয়তম যে মানুষ, তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার প্রস্তুতি নিয়ে অনন্য ত্যাগের আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। আল্লাহর নির্দেশেই তিনি ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন মক্কার মরু প্রান্তরে। মহান আল্লাহ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সংকল্পের দৃঢ়তা দেখে তাঁর কোরবানি কবুল করেন এবং হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্থলে একটি দুম্বা কোরবানি মঞ্জুর করেন। এরই সূত্র ধরে গোটা মুসলিম জাহানে আজও চলে আসছে কোরবানির এই ধারা। এর ভেতর দিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিকে অগ্রসর হয় মুসলিম জাতি।
কোরবানি মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যাঁদের ওপর জাকাত ওয়াজিব, তাঁদের ওপর কোরবানিও ওয়াজিব। পশু কোরবানির মাধ্যমে গরিব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ ও সম্পদত্যাগই হলো কোরবানি। কোরবানি শুধু একটি আনন্দ-উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও দর্শন। ঈদুল আজহা আত্মত্যাগের প্রেরণায় উজ্জীবিত এক অনন্য আনন্দ উৎসব।
ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিজের অহমিকা ও উচ্চাভিলাষ উৎসর্গ করা। পশু কোরবানির ভেতর দিয়ে মানুষের ভেতরে থাকা পশুশক্তি, কাম-ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুকেই ত্যাগ করতে হয়।
শোকের মাসে সেই ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল কুরবানীর ঈদ আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে; এই ঈদ সকলে জন্য এক মহিমান্বিত আবেদন নিয়ে এসেছে সে আবেদন হলো ত্যাগের দ্বারা আপনার জীবনকে সমুজ্জ্বল করা। কুরবানীর ঈদের সময় পশু কুরবানী করা এটিই কুরবানী নয়, দেশের জন্য নিজের জীবনকে উৎস্বর্গ করাও কুরবানী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল, তিনি শাহাদৎবরণ করেছিলেন, আসলে তিনি সেদিন দেশের জন্য নিজের জীবনকে উৎস্বর্গ করে দিয়ে ছিলেন। এই দুইটি মিলে এবছরের ঈদের তাৎপর্য অন্যরকম। শোকের মাসে ঈদ উদযাপন করতে গিয়ে আমরা যেন আমদেরে ভাবগাম্ভীর্য এবং আমাদের ভিতরের যে পবিত্রতা সেটি যেন ক্ষুণ্ণ না হয় সেই দিকে সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা উচিত।
মত ও পথ’র পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, বিপণনকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।