শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা দুই শর্তে ফিরতে রাজি!

বিশেষ প্রতিবেদক

শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা দুই শর্তে ফিরতে রাজি!
ছবি : সংগৃহিত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গারা দুই শর্তে স্বদেশে ফিরতে রাজি। আজ রোববার বিকেলে এমন তথ্য জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা।

তিনি জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান চীনের প্রতিনিধিদল। ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। সেখান থেকে গাড়িযোগে দুপুর ১টার দিকে বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তে জিরো লাইনের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিদর্শন করেন এবং প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বেশ কয়েকজন সাধারণ রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন।

universel cardiac hospital

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ শামছুদ্দৌজা আরও জানান, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তুমব্রু শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে কথা বলেননি। তিনি সরাসরি শূন্যরেখায় ঢুকে হেঁটে হেঁটে ৬ থেকে ৮ জন সাধারণ রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন।

চীনের রাষ্ট্রদূত তাদের মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা রাষ্ট্রদূতকে জানায়- দুই শর্তে মানলেই তারা স্বদেশে ফিরে যাবে। শর্তগুলো হলো  পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে হবে এবং নিজ ভিটেমাটিতে বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

এরপর প্রতিনিধি দলটি তুমব্রু সীমান্ত থেকে ঘুমধুম বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতুর জিরো পয়েন্ট পরিদর্শন করেন ও মিয়ানমারের কয়েকজন বিজিপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা গাড়িযোগে কক্সবাজারে পৌঁছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে যান। সেখানে আধা ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। এরপর তারা হোটেলে চলে যান।

তবে প্রতিনিধি দলের প্রধান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিনিধি দলের কাল সোমবার আবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।

তুমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গাদের দুই শর্তে মিয়ানমারের ফিরে যাওয়ার বিষয় নিয়ে রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দুই শর্ত কেন হবে? আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমারের নাগরিকদের যা যা অধিকার আছে, ঠিক সেসব অধিকার দিলে আমরা এখনি ফিরে যাব। চীনের রাষ্ট্রদূত এখানে এসে তড়িঘড়ি করে দুইজন শিশু ও দুইজন বয়স্ক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে চলে যান। যেখানে আমাদের যেতে দেয়নি। তার মানে এই নই যে, দুই শর্তে আমরা ফিরতে রাজি। এখানে সাড়ে ৪ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা রয়েছে।

এদিকে, সকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলার নেতৃত্বে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান মার্কিন প্রতিনিধি দলটি। এরপর দুপুরে প্রতিনিধিদলটি যান কুতুপালং ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কথা বলেন এবং রোহিঙ্গাদের সেবা ও খাদ্য সহায়তার কার্যক্রমগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। তারপর বিকেল ৪টার দিকে তারা কক্সবাজার ত্যাগ করেন।

গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায়ও প্রতিনিধি দল পাঠায় চীন। চীনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার। কিন্তু রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায় সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে যায়।

২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্র্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।

পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে