ক্যাসিনো ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিজ সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠার পরে প্রথমদিনেই বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সম্পদের হিসাব তলবে এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
যুবলীগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন সংগঠনের চেয়ারম্যান নিজের ধানমন্ডির বাসভবনেই রয়েছেন। কারো সঙ্গে দেখা দিচ্ছেন না। ফোনেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের প্রথমদিকে অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। ১৯ সেপ্টেম্বরে সংগঠনের এক প্রোগ্রামে তিনি বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে শাস্তি হবেই। তবে প্রশ্ন হলো কেন এতদিন পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হলো? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এতদিন কোথায় ছিলেন? অতীতে সব জানতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমার দিকে আঙ্গুল তুলছেন। এতদিন কেন ব্যবস্থা নেননি? এখন বলছেন, ৬০টি ক্যাসিনো ছিল। তাহলে কি এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আঙ্গুল চুষছিলেন? যে ৬০ জায়গায় ক্যাসিনো সেই ৬০ থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সে সময় ক্যাসিনো চলল, আর সেই এলাকার পুলিশ কী করছে? র্যাব কী করছে? তাদের অ্যারেস্ট করা হোক। আমাকে অ্যারেস্ট করবেন করেন? রাজনীতি করি। আমাকে অ্যারেস্ট করবেন, আর আমি বসে থাকব? এতদিন ক্যাসিনো চলত, আপনারা জানতেন না?’
তবে এর পরের দিনই নিজের সুর নরম করেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি গণমাধ্যমে অবৈধ ক্যাসিনোর খবর ছাপা হচ্ছে এবং আমাদের দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। আমি বলতে চাই, আগে জানলে ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতাম। এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে।
এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর এক সাংগঠনিক প্রোগ্রামে তিনি বলেন, ‘পতন হলে স্ত্রী ছাড়া কেউ পাশে থাকে না। জমিনে উত্থান দেখেছি পতনও দেখেছি। পতন হইলে কেউ নাই, বৌ ছাড়া কেউ নাই।’
এছাড়াও যুবলীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের অনিয়মের বিষয়ে উত্থাপন করে তাদের সমালোচনয় মুখর থাকতেন তিনি।
এর পরেও কয়েকদিন সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন ওমর ফারুক চৌধুরী। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদে সঙ্গে তাকে দেখা যায়। ওই দিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের সফরে ভারত যান।
আর সেদিন বিকালেই ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁর নামে থাকা সব হিসাবের লেনদেন তথ্য, বিবরণীসহ সব পাঠাতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহনগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটসহ যুবলীগের একাধিক নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিদেশ যাওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক হিসাব তলবের পরে নিজেকে গুটিয়ে রেখে ধানমণ্ডির বাসভবনে আছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। এখন দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকে যাচ্ছেন না ধানমণ্ডির পাঁচ নম্বর সড়কের যুব জাগরণের অফিসেও। যুব জাগরণের এই অফিসটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফারুক নিজেই।
যুবলীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, এক মাসেরও বেশি সময় আগে যুবলীগ চেয়ারম্যান পার্টি অফিসে এসেছিলেন। সর্বশেষ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাংগঠনিক ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
- আরও পড়ুন >> ৯৭ শতাংশ মানুষ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে সন্তুষ্ট
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবলীগের এক নেতা বলেন, চেয়ারম্যান স্যার এখন বাসায় আছেন। তিনি বাসায় টিভি দেখেই সময় কাটাচ্ছেন। আমাদের সঙ্গেও দেখা দিচ্ছেন না তিনি।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ সংগঠনের চেয়ারম্যানের দেশত্যাগে সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি চেয়ারম্যান সাহেব বাসায় রয়েছেন।
২০০৯ সালে যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন ওমর ফারুক চৌধুরী। এরপর ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি ভারমুক্ত হয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।