মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনা নির্যাতন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে একশ পরিবারকে নভেম্বরে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে।
জানা গেছে, নোয়াখালির চরাঞ্চল ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে প্রাথমিকভাবে এই একশ পরিবার সেখানে যেতে আগ্রহী বলে।
তবে রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্ন এই চরে না পাঠাতে আপত্তি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভাসানচর সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা ছড়ানোরও অভিযোগ রয়েছে।
যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গারা যেতে আগ্রহী হলেই তাদেরকে ভাসানচরে পুনর্বাসন করা হবে।
সে ধারাবাহিকতায় আগামী মাস থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে একশ আগ্রহী পরিবারকে ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হবে।
এদিকে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা নিজ দেশ মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোথাও যেতে রাজি না হওয়ায় উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে বেশ কয়েকটি শর্তও জুড়ে দিয়েছে।
মিয়ানমারে ফেরাতে বাংলাদেশ একের পর এক উদ্যোগ নিলেও মিয়ানমারের নানা চাতুরি আর রোহিঙ্গাদের জুড়ে দেওয়া শর্তে দুই দফা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়ে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত হামলার ধুয়ো তুলে সেখানকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর কাঠামোবদ্ধ নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষন এবং বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে ঢল নামে রোহিঙ্গাদের।
আগে থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারাসহ বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের মধ্য থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
নৌ-বাহিনীর মাধ্যমে চরটিকে বসবাসের উপযোগী করে তোলার পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে উন্নতমানের শেড।
তবে দাতা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের কারণেই রোহিঙ্গাদের মত বদলের আশঙ্কা করে আসছে কক্সবাজারের স্থানীয়রা।
অবস্থায় বর্তমানে ক্যাম্পগুলোতে চলছে মাঠ পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণের কাজ। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের অনেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে সম্মতি জানিয়েছেন বলে ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, একশ রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচরে যেতে রাজি হওয়ায় নভেম্বর মাসেই তাদের স্থানান্তরের প্রস্তুতি চলছে। একটা তারিখ নির্ধারণ করে তাদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।