ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডে ইমেজ সংকটে পড়া যুবলীগের ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতৃত্ব খুঁজতে ‘পরিচ্ছন্ন রাজনীতি, যুবলীগের প্রতিশ্রুতি’ স্লোগানকে ধারণ করে সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ শনিবার।
বেলা ১১টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কংগ্রেস উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন তিনি।
কংগ্রেসের প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব মধ্যাহ্নভোজের পর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। এখানে যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হবে।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেন, যুবলীগের নেতৃত্ব বাছাই কাউন্সিলররা ঠিক করবে। তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে। তাদের সম্মতিতে পরবর্তী নেতৃত্ব আসবে। এখানে অবশ্যই আমাদের অভিভাবক সভাপতি রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনার মূল্যবান পরামর্শ আমরা নেব নেতৃত্বের দ্বার উন্মোচনে।
এদিন কাদের আরও বলেন, আগামীকাল (আজ শনিবার) যখন দ্বিতীয় অধিবেশন হবে কাউন্সিল সেশন যেভাবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জন্য নাম আহ্বান করেছি… এখানে চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রার্থীতা আসবে। অধিক প্রার্থী থাকলে তাদেরকে একজন হওয়ার জন্য সময় দেব। সেই সময় সীমার মধ্যে কম্প্রোমাইজ না হলে উপস্থিত নেতারা এবং আমাদের সর্বোপরি আমাদের নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে নতুন কমিটির চেয়ারম্যান-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করব।
সম্প্রতি দলের মধ্যে চলমান শুদ্ধি অভিযানে ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডে একে একে যুবলীগ নেতাদের নাম প্রকাশ্যে আসে। এতে সংগঠনের ইমেজ সংকট তৈরি হয়। কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে সেটিই নেতাকর্মীদের কাছে এখন সবচেয়ে আলোচনার বিষয়।
আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সংগঠনের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, যুবলীগের এই কংগ্রেসে সংগঠনটির জন্য এমন নেতৃত্ব আনা হচ্ছে, যারা ভাবমূর্তি সংকটে পড়া সংগঠনটির সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে। একই সঙ্গে সংগঠনের সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির সূচনা করবেন। ৫৫ বছরের বয়সের সীমারেখা থাকায় অবধারিতভাবে যুবলীগের নেতৃত্ব যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত তরুণদের হাতে। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে কি না-সেটিও বড় ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়াবে এবার।
যুবলীগের ষষ্ঠ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালে। দীর্ঘ ৭ বছর পর তাই এই কংগ্রেসকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের আগ্রহ প্রবল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশ ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে গেছে। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এবারের কাউন্সিলে ৭৭টি সাংগঠনিক ইউনিট থেকে ৩ হাজার কাউন্সিলর এবং প্রায় ২৫ হাজার ডেলিগেটর আসবে। একই সঙ্গে ৮টি বিদেশি ইউনিটের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটররা উপস্থিত থাকবে।
তিনি জানান, সপ্তম কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে বয়সের ৫৫ বছরের সীমারেখার বিষয়টি যুক্ত হবে। বয়সের ৫৫ বছরের বিষয়টি এবার সম্মেলনে গঠনতন্ত্রে যোগ করতে প্রস্তাবনা থাকছে বলেও জানান চয়ন ইসলাম।
যুবলীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমের ছেলে এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম ও আরেক ছেলে শেখ ফজলে নাঈম, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, ক্রিকেটার ও সাংসদ শরাফি বিন মুর্তজা, যুবলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মঞ্জুর আলম শাহিন, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ বদিউল আলম, ফজলুল হক আতিক, ফারুক হাসান তুহিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারি, ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এন আই আহমেদ সৈকত।
১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় যুবলীগ। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছয়টি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটির সবশেষ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে।
- ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশে প্রবেশে অপেক্ষায় অসংখ্য নারী-পুরুষ
- মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত পাশে ছিল ভুলিনি : কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী
১৯৭৪ সালের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে আমির হোসেন আমু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা মহসীন মন্টু। ১৯৯৩ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। ১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক।
সর্বশেষ ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস। এ কংগ্রেসে ৬৪ বছর বয়সে ভারপ্রাপ্ত থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী।