দেশে শিশু, নারী ও প্রতিবন্ধীরা ক্রমাগত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে জানিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্ষকদের ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি ওঠেছে।
এ বিষয়ে সরকারি ও বিরোধীদলীয় এমপিরা এক জোট হয়ে বলেছেন, এই পৃথিবীতে তাদের (ধর্ষক) থাকার কোনো অধিকার নেই। আবার কেউ কেউ দাবি করেছেন, তাদের ক্রসফায়ারে দিলে কোনো পাপ হবে না বরং বেহেশতে যাওয়া যাবে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদের বৈঠকে এ বিষয়ে প্রথমেই আলোচনার সূত্রপাত করেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ।
এর আগেও একাধিকবার এ দাবি জানানো হয়েছে সংসদ থেকে।
ধর্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমার প্রিয় নেতা এরশাদ সরকারের আমলে এসিড সন্ত্রাস খুব বেড়ে গিয়েছিল। তিনি ও তার সরকার উদ্যোগ নিয়ে প্রতিরোধের জন্য এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই, এখন ধর্ষণ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আমার মনে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে এই ধর্ষণ থামানো যাবে না। সময় এসেছে চিন্তাভাবনা করার। ধর্ষণে দায়ী ব্যক্তিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা না করে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করা হোক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে চুন্নু বলেন, আপনার মন্ত্রণালয় এত ক্রসফায়ার দিচ্ছে, বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারা যায়, ধর্ষণের মতো একটি জঘন্য অপরাধে আজও একজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেল না! এ বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। ক্রসফায়ার ছাড়া কোনোক্রমেই এটি বন্ধ করা যাবে না। ধর্ষণে দায়ী ব্যক্তিদের সাজার বিষয়টি পত্রিকায় ভালোভাবে ছাপানোর দাবি জানান তিনি।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সম্প্রতি ধর্ষণ মহামারী রূপ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, শিশু, নারী, শ্রমিক, প্রতিবন্ধীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অর্থাৎ কেউ এদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হোন, সেই ধর্ষণের কোন ক্লু ছিল না কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীকে ধরতে পেরেছে। এজন্য আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি দাবি করেন, ধর্ষকদের যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন এই দেশের মানুষ মনে রাখে। কিন্তু বিচার যখন শেষ হয় তখন মানুষ সেটা মনে রাখতে পারে না। কারণ ১০ থেকে ১৫ বছর পর এই ধর্ষণের বিচার হয়।
ফিরোজ বলেন, এ পর্যন্ত ২৮৪ জনকে গুলি করে মারা হয়েছে। এরা মাদকের আসামি। পরশুদিনও একজনকে মারা হয়েছে। কোন আইনে মারা হয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষিত হলো, সারা জীবনের জন্য সে কারও কাছে মুখ দেখাতে পারবে না। কোর্টে গিয়ে কী হবে? স্পিকার, কোনো সাক্ষী নেই। অথচ এই মেয়েকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাকে বলতে হবে কিভাবে কী ঘটনা ঘটেছে। এর চাইতে লজ্জাজনক ঘটনা আর কিছু নেই। আর সারা জীবন তাকে এই লজ্জা বয়ে বেড়াতে হবে। আমি এই মানবাধিকারকর্মীদের বলব আপনারা যদি ধর্ষণের শিকার হতেন, আপনাদের মা-বোন যদি ধর্ষণের শিকার হতো?
ঘাটাইলের ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় পুলিশ সেই দিন যদি সেই ধর্ষণকারীদের পাঁচজনকে গুলি করে মধুপুরে নিয়ে মারা হতো তাহলে পরবর্তী সময়ে আবার ওই বাসে ধর্ষণ ঘটনা ঘটতো না।
তিনি বলেন, এখন থেকে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতেছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ধর্ষণকারীকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যাওয়া হোক জিজ্ঞাসাবাদের নামে। তাকে নিয়ে ওখানে গুলি করে মারুক। তারা দেখুক সেখানে তার লাশ পড়ে আছে।
- সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ৩ ঘণ্টা তালাবদ্ধ
- পাকিস্তান সফরে খেলা হবে টেস্ট টি-টোয়েন্টি ওয়ানডে সবই
যদি এদের বিচার করতে পারি বিচার মনে এনকাউন্টারে মেরে ফেলা হোক। ধর্ষকদের স্বীকারোক্তি নিয়ে ওদেরকে সেখানেই মেরে ফেলা হোক। নতুবা এটা বন্ধ হবে না
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারতে একবার বাসে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে সেখানে ওই ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয়। তারপর ভারতে ধর্ষণের ঘটনা কমে যায়। আমাদের নাতি-নাতনি আছে। যাদের নিয়ে আমরা প্রতিদিন চলি। এটা হতে পারে না। প্রথমত, এখানে আইনমন্ত্রী আছেন। তিনি এ বিষয়ে কঠোর আইন করবেন। আর দ্বিতীয়ত, যারা এ কাজ করেছেন তাদের এই পৃথিবীতে থাকার কোনো অধিকার নেই। এজন্য আমি চুন্নুর প্রস্তাবকে সমর্থন করি।
এরপর মুজিবুল হক মাইজভান্ডারী বলেন, আমি টুপি মাথায় দিয়ে আল্লাহকে হাজির-নাজির করে বলছি এদের ক্রসফায়ারে দিলে কোনো পাপ হবে না বরং বেহেশতে যাওয়া যাবে।