বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
জানা গেছে, ভবন ভাঙার কার্যক্রম পরিচালনা এবং দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে দুটি টিম গঠন করা হয়েছে। যারা বিজিএমইএ ভবন ভাঙায় কাজ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন।
বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কার্যক্রম পরিচালনা এবং দুর্ঘটনা মোকাবিলায় দুটি টিমের মধ্যে একটি টিম হলো টপ সুপারভিশন কমিটি। এ টিমে রয়েছে- রাজউক, বুয়েট, ফায়ার ব্রিগেড, প্রকল্প কর্মকর্তা (সেনাবাহিনী, ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড), অথরাইজড অফিসার (রাজউক), হাতিরঝিল প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক।
এছাড়া সার্বক্ষণিক তদারকি কমিটিতে রয়েছে- হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক, হাতিরঝিল প্রকল্প কর্মকর্তা (সেনাবাহিনী, ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড) এবং হাতিরঝিল প্রকল্প ব্যবস্থাপক।
এর আগে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা নিয়ে বেশ কয়েকবার জটিলতা দেখা দেয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনটি ভাঙার দরপত্র আহ্বানের পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভবনটি ভাঙতে কাজ পায় ‘সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের দরপত্র ছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকার। সে অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশও দেয়া হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নিয়েছে রাজউক।
তারা এ ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ফোর স্টার’ গ্রুপকে কাজ দেয় রাজউক। তাদের দরপত্রে টাকার পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তবে এখন তারা এক কোটি দুই লাখ ৭০ হাজার টাকায় ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয় নিয়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়। ওই ভবন সিলগালা করে দেয়ার পর ভবন থেকে থেকে লিফট, এসিসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ। এখন যেহেতু লিফট, এসিসহ অনেক মূল্যবান সামগ্রী নেই, সেই অনুযায়ী এক কোটি দুই লাখ ৭০ হাজার টাকায় ভবনটি ভাঙার সায় দেয় কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ গত বছরের ১২ এপ্রিলের মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সময় পার হওয়ার পর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ১৬ এপ্রিল মাঠে নামে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
এরপর বিজিএমইএ ভবনে অভিযানে যায় রাজউক। প্রথম দিনই ভবনে থাকা বিভিন্ন অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সুযোগ দিয়ে পরবর্তীতে ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়। পরে অবশ্য আরও কয়েক দফা সুযোগ দেয়া হয় মালামাল সরানোর জন্য।
২০০৬ সালের দিকে হাতিরঝিলে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিজিএমইএ ভবন অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয় গত ১২ এপ্রিল। ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএকে এক বছর ১০ দিন সময় দেন।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্প ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়।
রায়ে বলা হয়, ‘ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো।’ পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। এরপর ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।