আইসিসিতে ২৬ নাগরিক যে অভিমত দিয়েছেন

মত ও পথ

বাংলাদেশের ২৬ নাগরিক রোহিঙ্গা বিতাড়নের ব্যাপারে তদন্তে এখতিয়ারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন৷ তাঁরা মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়া, নির্যাতন ও পরবর্তী অবস্থার তদন্ত ও বিচার দাবি করেন৷

এই ২৬ জন নাগরিক মনে করেন, দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার বিষয়ে তদন্তের এখতিয়ার আছে৷ গত ১৮ জুন তাঁরা এই পর্যবেক্ষণ পেশ করেন৷ ২০ জুন এ নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তবে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি৷ বাংলাদেশও সেখানে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে৷ বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ গোপনীয়৷ তবে এই ২৬ জন নাগরিকের পর্যবেক্ষণ গোপনীয় নয়, উন্মুক্ত৷

বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের (সিপিজে) নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান ও সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান এই পর্যবেক্ষণ পেশ করেন৷ তাঁরা ৪০ পৃষ্ঠার বিবরণসহ এই পর্যবেক্ষণ জমা দেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে৷

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আশা করা হয়েছে, ‘‘এই পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে আইসিসি-র তদন্তের এখতিয়ারের ব্যাপারে অনুমোদন দেবে৷ রোহিঙ্গাদের  নির্যাতনের মাধ্যমে সেদেশ থেকে বিতাড়নের মাধ্যমে মিয়ানমার তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে৷ বাংলাদেশি আইনেও এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা আছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে৷’

গত বছরের ২৫ আগস্টের পর সেখানে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের বিবরণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণও রয়েছে পর্যবেক্ষণে৷ এছাড়া পর্যবেক্ষণে লিঙ্গ ভিত্তিক অপরাধ, নিপীড়ন ও গণহত্যার কথাও বলা হয়েছে৷ ঐ ঘটনায় বাংলাদেশে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে৷

পর্যবেক্ষণ দানকারী ২৬ জনের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এমিকাস কিউরি বা আদালতের বন্ধু হিসেবে একটি অবজারভেশন পাঠিয়েছি৷ সেখানে বলা হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর যা ঘটেছে তা তদন্ত করার এখতিয়য়ার আইসিসি-র আছে৷ সেটা কীভাবে রয়েছে তা ব্যখ্যা করা হয়েছে৷ ব্যখ্যা করতে গিয়ে মূলত আমরা দু’টি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছি৷ প্রথমটি হলো – যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে যেমন গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, ধর্ষণ বা সেক্সুয়াল অফেন্স, নিপীড়ন এই সব অপরাধই আইসিসি-র বিবেচ্য অপরাধের মধ্যে পড়ে৷ আইসিসি-র মূল চারটি অপরাধের মধ্যে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ রয়েছে৷ আইসিসি-র এলিমেন্ট অফ অফেন্স-এর মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে কী কী পড়তে পারে তা বলা হয়েছে৷ এর মধ্যে একদেশ থেকে আরেক দেশে বিতাড়ন, সংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা করা, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, সেক্সুয়াল অফেন্স করা, নারীদের জোর করে প্রেগনেন্ট করা, হত্যা করা এই সব অপরাধ এলিমেন্ট অফ অফেন্স-এর মধ্যে পড়ে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘দ্বিতীয় যে বিষয়টি রয়েছে তা হলো – মিয়ানমার আইসিসি সংক্রান্ত রোম স্ট্যাটুতে স্বাক্ষর করেনি৷ কিন্তু অবজেকটিভ টেরিটোরিয়াল জুরিকডিকশন নামে একটি প্রিন্সিপাল আছে৷ সেই নীতি অনুযায়ী, এই অপরাধগুলো যেহেতু মিয়ানমার থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ অবধি সংঘটিত হয়েছে৷ আর বাংলাদেশ যেহেতু রোম স্ট্যাটুতে স্বাক্ষর করেছে, সে কারণে আইসিসি-র এই অপরাধের তদন্ত করার এখতিয়ার আছে৷’’

নাগরিকদের মধ্যে আরো আছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার৷ তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে অপরাধ হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবেই মাবতাবিরোধী অপরাধ৷ সেখানে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হয়েছে৷ এর তদন্ত এবং বিচার হওয়া প্রয়োজন৷ বাংলাদেশ সরকার কিছুটা দ্বিধায় ভুগে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছে৷ তবে সেই পর্যবেক্ষণ বা মতামতে কী আছে, আমরা তা জানি না৷ আমরা আশা করি সরকারও তদন্ত এবং বিচার চেয়েছে৷’’

প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলাদেশের আরো ৪১ জন নাগরিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইসিসিতে তাঁদের মতামত দিয়েছিলেন।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে