বিতর্কিত ঠিকাদার ও যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের দুটি মামলায় জামিন পেতে নামের কারসাজি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি অস্ত্র ও মাদক মামলার এজাহারে দেওয়া নাম কারসাজি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।
এমনটিই জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফজলুর রহমান খান (এফ আর খান)। তিনি বলেন, এসব মামলার এজাহারে তার নাম ছিল এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম)। সেটি গোপন করে হাইকোর্টের কার্যলতালিকায় নাম লেখা হয়েছে এস এম গোলাম বনাম রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার নম্বর ছিল ১৪১১৯/১৯। গত ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় মামলাটি ১৩৫ নম্বর ক্রমিকে ছিল। পুরাতন ১৫ কোর্টের কার্যতালিকা এটি।
জি কে শামীমের জামিন আবেদনের কপি আদালতে ওঠার আগে এফ আর খান সেটি পাননি বলে দাবি করেন । তিনি বলেন, অ্যাটর্নি কার্যালয়ে আবেদনটি গোপন করে রাখা হয়েছিল। কে বা কারা গোপন করেছিল জানি না। আজ রবিবার এ মামলার কপি বের করে জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করেছিলাম। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন বাতিল করেছেন।
নামের কারসাজির ব্যাপারে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বলেন, মামলার এজাহার, চালান কপিতে (পুলিশ ফরওয়ার্ডিং) যে নাম ছিল সে নামই আমরা জামিন আবেদনে উল্লেখ করেছি। সেখানে নাম ছিল এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম। কিন্তু কোর্টের কার্যয়তালিকায় নাম লেখা ছিল এস এম গোলাম। এটি আমাদের কোনো কারসাজি না। কারণ আমরা কোর্টের কার্যীতালিকায় নাম বসাই না।
হাইকোর্টের বিভিন্ন মামলায় আবেদনকারীদের সংক্ষিপ্ত নাম থাকে বলেও জানান জি কে শামীমের আইনজীবী মেহেদী। তিনি বলেন, এ ছাড়া আমি ছিলাম এই মামলার সিনিয়র আইনজীবী। পিটিশন দাখিল করেছেন অন্য আইনজীবীরা।
হাইকোর্ট জি কে শামীমকে যে দুটি মামলায় (অস্ত্র ও মাদক) জামিন দিয়েছিল আদালত, সেটি জামিনযোগ্য বলে দাবি করে মেহেদী বলেন, এই দুই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা হলো ছয় মাসের কারাদণ্ড।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৪ ও ৬ ফেব্রুয়ারি এই দুই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পান জি কে শামীম। ৬ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র মামলায় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে ৬ মাসের জামিন পান জি কে শামীম। মাদক মামলা্য় ৪ ফেব্রয়ারি হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চ থেকে জামিন নেন তিনি।
প্রায় এক মাস পর গত শনিবার বিষয়টি নজরে আসে অনেক সংবাদকর্মীর। শামীমের জামিনের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। গতকাল জামিন বাতিলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে দুটি মামলাতে দেওয়া জামিন আদেশ বাতিল করেন আদালত।
শামীমের আইনজীবী শওকত ওসমান জানিয়েছিলেন, জি কে শামীম হাইকোর্টের দুই বেঞ্চ থেকে অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলার একটিতে এক বছর ও অপরটিতে ছয় মাসের জামিন পেয়েছেন। মানিলন্ডারিং ও দুদকের আরও দুটি মামলা আছে, সেগুলোর জন্য অলরেডি হলফনামা করা হয়েছে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযোগের মধ্যে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ওই ভবন থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা, এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভি্যানের সময় জি কে শামীম ও তার সাত সশস্ত্র দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি অস্ত্র আইনের মামলায় বিচার শুরু হয়েছে।
ওই দিন ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রবিউল আলম অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত আসামিরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।
এ মামলায় জি কে শামীমের সঙ্গে অভিযুক্ত সাত দেহরক্ষী হলেন- দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।