মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমেদ।
এর আগে রোববার এ তথ্য জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। তবে এ টি এম আজহারের আইনজীবী শিশির মনির জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের কপি পেলে ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করা হবে।
সোমবার দুপুরের পর হাইকোর্ট থেকে এ পরোয়ানা গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায় বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনও কারা কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার আরও জানান, দুপুর ২টার পর হাইকোর্ট থেকে লাল কাপড়ে মোড়ানো পরোয়ানাটি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছানো হয় বলে জানা গেছে। এখন এটি তাকে পড়ে শোনানো হবে।
এর আগে রোববার (১৫ মার্চ) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ আপিল বিভাগের চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ২৪৫ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়। নিয়মানুযায়ী এখন শুধু ১৫ দিনের মধ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ পাবেন আজহার। এটিএম আজহারুল ইসলাম বর্তমানে কাশিমপুর-২ কারাগারের কনডেম সেলে রয়েছেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ টি এম আজহারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আরও দুটি ধাপ রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকায় এখন রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাই একমাত্র পথ। এখানে বিফল হলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতেই হবে তাকে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন না করলে সরকার জেলকোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিশেষ অধিকার রয়েছে। সেই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যে কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।’ আদালতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার পর যদি নামঞ্জুর হয়, তাহলে কারা কর্তৃপক্ষ জেলকোড অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি ছিলেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ৩১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ফলে এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসিকাষ্ঠেই যেতে হচ্ছে।
প্রায় ৫ বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে তিন অভিযোগে এটিএম আজহারের মৃত্যুদণ্ড এবং দুই অভিযোগে ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। আপিলের রায়েও রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা ও হত্যার তিন ঘটনায় তার মৃত্যুদণ্ড সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ভিত্তিতে বহাল থাকে। অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের আরেকটি ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া ৫ বছরের সাজাও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ভিত্তিতে বহাল রাখা হয়। আর বহু নারীকে রংপুর টাউন হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে ধর্ষণের জন্য তুলে দেয়ার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে আজহারের ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হলেও এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর আপিলে আসা এটি অষ্টম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় হয়েছে।