আশির দশক। এক জন রোম্যান্টিক হিরো হিসেবে তখন বলিউড মাতাচ্ছেন ঋষি কাপুর। একের পর একটা ছবির অফারও পাচ্ছিলেন তিনি। তেমনই একটি ছবির অফার এসেছিল তার হাতে। ছবির নাম ‘পেয়ার ঝুকতা নেহি’। ছবিটির পরিচালনা করেছিলেন কে সি বোকারিয়া।
ছবিটি ১৯৮৫ সালে মুক্তি পায়। কিন্তু এর শুটিং শুরু হয়েছিল তার ঠিক পাঁচ বছর আগে থেকে, অর্থাত্ ১৯৮০ সালে। রোমান্টিক ছবি। অতএব এমন রোল করতে পারেন সে রকমই হিরো খুঁজছিলেন বোকারিয়া। তখনই ঋষি কাপুরের কথাটা মাথায় আসে তার। ছবির যে স্ক্রিপ্ট ছিল, তাতে ঋষি কাপুরই বেশ মানানসই হবে রোমান্টিক হিরোর জন্য, এই ভেবেই তাকে ছবিতে অভিনয়ের অফার দেন বোকারিয়া।
বলিউডের ‘চিন্টুজি’ তখন আর একটি ছবিতে দু’বছরের জন্য সই করে ফেলেছিলেন। ছবিটির নাম ছিল ‘জমানে কো দিখানা হ্যায়’। বোকারিয়া যখন ঋষির কাছে অফার নিয়ে যান, তা তিনি ফিরিয়ে দেন। কারণ তার হাতে সময় ছিল না। শুধু তাই নয়, অন্য একটা ছবিতেও সই করে ফেলেছিলেন তত দিনে।
মহা সমস্যায় পড়লেন বোকারিয়া। ঋষির জায়গায় কাকে নেবেন? অগত্যা ডাক পড়ল মিঠুন চক্রবর্তীর। সে সময় বলিউডে তেমন নামডাক হয়নি মিঠুনের। সুপারহিট ছবিও সংখ্যাও ছিল না। তবে রোম্যান্টিক হিরোর চেয়ে অ্যাকশন আর ড্যান্সিং হিরো হিসেবেই বলিউডে কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু বোকারিয়া যে ছবি বানাচ্ছিলেন তার সঙ্গে অ্যাকশন বা ডান্সিং হিরো ঠিক খাপ খাচ্ছিল না।
কিন্তু ঋষি কাপুর না করে দেওয়ায় হাতে আর তেমন কেউ ছিল না বোকারিয়ার। এ দিকে ফিল্মের শুটিংও শুরু করতে হবে! ফলে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই মাঠে নেমে পড়লেন পরিচালক। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তার প্রমাণ পরে পেয়েছিলেন তিনি।
ছবিতে মিঠুনকে সই করিয়ে নিলেন বোকারিয়া। শুটিংও শুরু হল। এই ছবির আগেই মিঠুন আরও একটা ছবিতে সই করেছিলেন। ছবির নাম ‘ডিস্কো ড্যান্সার’। ছবিতে এক জন অ্যাকশন হিরো এবং ডান্সিং স্টার হিসেবেই অভিনয় করেছিলেন তিনি।
‘পেয়ার ঝুকতা নেহি’ ছবির শুটিং চলতে চলতেই ১৯৮২ সালে মুক্তি পেল মিঠুনের ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ ছবিটি। সিনেমা হলে মুক্তি পেতেই সুপারহিট হল সেই ছবি। আর এই ছবির পর থেকেই বলিউড এমনকি গোটা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মিঠুন।
ইতিমধ্যেই ১৯৮৩ সালে ‘পেয়ার ঝুকতা নেহি’ ছবির শুটিং শেষ হয়। শুধু মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু মিঠুনের মতো এক জন অ্যাকশন এবং ড্যান্সিং হিরো ছবিটায় কতটা সফল হবে তা নিয়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের মধ্যে একটা আশঙ্কা ছিল। ছবিটি বাজারে আদৌ চলবে কি না তা নিয়েও একটা দোলাচল ছিল। ফলে পুরো শুটিং শেষ হওয়ার পরেও দু’বছর ছবিটির মুক্তি আটকে গিয়েছিল।
কেউ যখন ছবিটির মুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছিলেন না, পরিচালক বোকারিয়া নিজেই রিলিজ করেন সেটি। ছবিটি রিলিজ হওয়ার পরই ব্লকবাস্টার হয়। ছবির জন্য সিলভার জুবিলি পুরস্কারও পান বোকারিয়া। দর্শকরাও এই ছবির মধ্যে দিয়ে এক নতুন মিঠুনকে আবিষ্কার করেন। রোম্যান্টিক হিরো হিসেবেও অসামান্য অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন মিঠুন।
‘পেয়ার ঝুকতা নেহি’ ছবিটি রোম্যান্টিক হলেও বোকারিয়া মিঠুনের কথা ভেবেই ছবির মধ্যে অ্যাকশন, নাচও জুড়ে দিয়েছিলেন। আর এটাই হয়েছিল বোকারিয়ার সাফল্যের জাদুকাঠি। সফল হয়েছিলেন মিঠুনও। ছবিটি যখন ব্যাপক হিট হল, ঋষি কাপুর খুব আক্ষেপ করেছিলেন। কেননা এই ছবি করার যে কথা ছিল তারই! অনেক সাক্ষাত্কারে তার এই ‘ভুলের’ কথা বলতেও শোনা গিয়েছে।
তবে ‘পেয়ার ঝুকতা নেহি’ ছবির অফার ফিরিয়ে দিলেও বোকারিয়ার পরের ছবি ‘নসিব আপনা আপনা’ ছবিতে কিন্তু সই করেছিলেন ঋষি। এবং কথা দিয়েছিলেন বোকারিয়ার কোনও ছবির অফার ফেরাবেন না।
বোকারিয়া এক সাক্ষাত্কারে জানান, এক দিন রাতে তার অফিসে ‘নসিব আপনা আপনা’ ছবির বিষয়ে কথা বলতে আসেন ঋষি। ঘরে ঢুকেই সামনে রাখা ‘পেয়ার ঝুকতা নেহি’ ছবির পুরস্কারটির উপর চোখ পড়ে তার। তখন বলে উঠেছিলেন, “আরে এই ট্রফিটা তো আমারই পাওয়ার কথা ছিল!” বোকারিয়া তখন বলেছিলেন, “সবই ভাগ্যের ব্যাপার!”
এর পর ঋষি বোকারিয়ার ‘নসিব আপনা আপনা’ ছবি শুট করেন। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সুপারহিট হয়। কিন্তু তার পরেও ‘প্যার ঝুকতা নেহি’-তে অভিনয় না করার জন্য আক্ষেপের সুর শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। তাঁর এই একটা ‘ভুল’ মিঠুন চক্রবর্তীকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছিল বলিউড।