হাটহাজারী মাদ্রাসায় তৎপরতা, কে হবেন শফীর উত্তরসূরি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

আহমদ শফী
ফাইল ছবি

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্মভিত্তিক বিভিন্নন ইস্যুতে আন্দোলনের উৎসভূমি হয়ে ওঠা হাটহাজারী মাদ্রাসার শীর্ষ পদে শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে তৎপরতায় প্রকাশ্যে এসেছে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব।

হাটহাজারী উপজেলার আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত বাংলাদেশের অন্যতম বড় এবং পুরনো কওমি মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) শাহ আহমদ শফী বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি।

৯৫ বছরের বেশি বয়সী শফীই ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে আসা হেফাজতে ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক (নায়েবে মুহতামিম)।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ আহমদ শফী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে কারো নাম ঘোষণা করতে পারেন- এমন গুঞ্জন শোনা গেলে শুক্রবার রাত থেকেই বাবুনগরীর অনুসারীদের তৎপরতা শুরু হয়।

শনিবার সকালে এ বিষয়ে আলোচনা করতে আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করেন মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।

জুনাইদ বাবুনগরী ছাড়াও মুফতি নূর আহমদ, মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা মো. ইয়াহিয়া, মাওলানা মো. শোয়েব এবং মাওলানা মো. কবির আহমেদ ছিলেন তাদের মধ্যে।

শনিবার দুপুরে হাটহাজারী মাদ্রাসার মসজিদে নামাজে অংশ নেন বাবুনগরীর অনুসারীরা হেফাজত নেতাকর্মীরা। তবে সেখানে বাবুনগরী ছিলেন না।

মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটহাজারী ওলামা পরিষদ নামের একটি সংগঠনের নেতারা সে সময় মসজিদের মাইকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নিয়োগের গুঞ্জন নিয়ে বক্তব্যও দেন।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথা আসতে শুরু করলে শনিবার রাতে অসুস্থ আহমদ শফী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বা সহকারী পরিচালক পদ তিনি দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহমদ শফীর ছেলে হেফাজত নেতা আনাস মাদানি গণমাধ্যমকে বলেন, এখন মাদ্রাসা বন্ধ। লকডাউনের আগে মাদ্রাসার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী চলে গেছেন। এই সুযোগে কিছু ‘মুনাফালোভী বহিরাগত’ সমস্যা করতে চেয়েছিল। তারা নামাজ পড়তে এসে বিনা অনুমতিতে মসজিদের মাইক নিয়ে সেখানে কথা বলে চলে গেছে। মাদ্রাসার মুহতামিম নিয়োগ বিষয়ে গুজব রটানো হচ্ছে। হাটহাজারী মাদ্রাসায় যিনি মুহতামিম পদে দায়িত্বশীল আছেন, তার অবর্তমানে শুরা কমিটি (কার্যকরী কমিটি) বসে ঠিক করবে পরবর্তী মুহতামিম কে হবেন। এক্ষেত্রেও এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ফেইসবুকে কিছু ছেলে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে। বড় হুজুরের (আহমদ শফী) সাথে সিনিয়র শিক্ষকরা দেখা করেছেন। মজলিসে শুরা নির্ধারণ করবে পরে কী হবে।

হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হলে শুক্রবার রাতে নিজের অনুসারীদের নিয়ে সভা করেন জুনাইদ বাবুনগরী।

এরপর শনিবার সকালেও হাটহাজারী সদরে বাবুনগরীর উপস্থিতিতে আরেকটি সভা হয়। সেখানে হাটহাজারী ওলামা পরিষদ নামের একটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

হাটহাজারী ওলামা পরিষদের সহ-সভাপতি মাওলানা সাইফুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাফর আলম, যুগ্ম সম্পাদক মীর ইদ্রিস ও নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা আবদুল ওয়াদুদ উপস্থিত ছিলেন ওই সভায়।

ওই সভা এবং মসজিদের মাইকের ঘোষণা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওলামা পরিষদ নেতা মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র মীর ইদ্রিস বলেন, “হুজুরের (আহমদ শফী) অসুস্থতাকে পুঁজি করে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নিয়োগ হতে পারে বলে কানাঘুষা আমরা শুনেছি। সেটা নিয়ে ওলামা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। মসজিদের মাইকে আমরা বলেছি, হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটি আছে। তারাই পরবর্তী মহাপরিচালক ঠিক করবে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই মেনে নেওয়া হবে। পরে হুজুর নিজেই লাইভে এসে একই কথা বলেছেন। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই।

এ বিষয়ে বাবুনগরীর বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বাবুনগরীর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী ইনামুল হক বলেন, সিনিয়র শিক্ষকরা গতকাল দুপুরে মহাপরিচালকের সাথে দেখা করে তাদের বক্তব্য জানিয়েছেন। তিনি (শফী) অসুস্থ, তখন কিছু বলেননি। পরে রাতে তিনি ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন। উনার বক্তব্য ও সিনিয়র শিক্ষকদের বক্তব্য একই, কোনো বৈপরীত্য এতে নেই। এটা নিয়ে কেউ জল ঘোলা করতে চায়।

শনিবার রাতে ফেইসবুকে দুই মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের ওই ভিডিও বার্তায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এ বিষয়ে বক্তব্য দেন অসুস্থ আহমদ শফী।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, মুহতামিম (পদ) পেয়েছি পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসার জন্য কী করেছি, না করেছি। কিছু কথা, কিছু অপবাদ শুনছি। আমার সময়ে কি লাভ হয়েছে, আপনারা সবাই জানেন, পুরা দুনিয়া জানে। পুরা জিন্দেগি মাদ্রাসার জন্য কোরবান করেছি। মাদ্রাসার জিম্মাদার আমি আছি। এখন আমার অবর্তমানে কে জিম্মাদার হবে না হবে তা শুরা ঠিক করবে। কাউকে জিম্মাদারি দিইনি। কাউকে নায়েবে মুহতামিম (সহকারী পরিচালক) বানাইনি। কাউকে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম (মহাপরিচালক) বানাইনি। যা শুনছেন তা গুজব।

সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে আহমদ শফী বলেন, সবার কাছে দোয়া চাই। মাদ্রাসার জন্য দোয়া করবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে