বিড়ি সিগারেটসহ সব ধরনের তামাক কোম্পানির পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় যে প্রস্তাব দিয়েছিল তা নাকচ করে দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পাল্টা চিঠিতে শিল্প মন্ত্রণালয় লিখেছে, এটা এখন বন্ধ করা সমীচীন হবে না বা যৌক্তিক হবে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ওই প্রস্তাবের ব্যাপারে বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আলোচনার পরে তামাকজাত পণ্যের বিক্রি বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম গণমাধ্যমকে বলছেন, ‘এটা একটা শিল্প, এখানে প্রচুর লোকজন কাজ করছে। সুতরাং এখান থেকে অন্যদিকে শিফট করতে গেলে, সময় নিয়ে নিয়ে, কৌশল ঠিক করে সেটা করতে হবে। এই শিল্প কোথায় যাবে, লোকগুলো কোথায় যাবে – সেটা একটা সময়ের ব্যাপার।’
এদিকে বিকালে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তামাকশিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধূমপান কিংবা তামাকজাতীয় পণ্যের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর সেবনকারীরা তা জেনে-শুনেই সেবন করছেন। এ শিল্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও তারা এটি সেবন করবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মোটিভেশন ছাড়া শুধু সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করে করোনাকালে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। অধিকন্তু এর উৎপাদন বন্ধ হলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে এবং আমদানিকৃত সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের ওপর দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আয় হারাবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ধূমপায়ী ও তামাকজাতীয় পণ্য সেবীদের মধ্যে এটি পরিহারের জন্য প্রচার জোরদার করতে পারে।
শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বৈশ্বিক অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে যথেষ্ট চাপ তৈরি হয়েছে এবং আগামী দিনে অনিবার্যভাবে এই চাপ বাড়বে। করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিল্প-কারখানা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটা স্থবির হয়ে রয়েছে। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক লোকজন বেকার হয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করলেও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারের জন্য দীর্ঘদিন এটি চালিয়ে নেয়া কষ্টকর হবে। এই অবস্থায় বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং শিল্প উৎপাদন বন্ধ করলে, তা হবে জাতীয় মারাত্মক ক্ষতি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাতীয় পণ্য সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সময়ের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মোটিভেশনাল কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করছে।
এর আগে মঙ্গলবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের তামাক পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার এবং তামাক কোম্পানিগুলোকে দেয়া অনুমতিপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।