টানা ৬৬ দিনের সরকারি ছুটি শেষে চলাচল শুরু হয়েছে গণপরিবহনের। করোনার বিস্তার প্রতিরোধে সীমিত যাত্রী বহনের নির্দেশনা দিয়ে ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে বাস ভাড়া। তবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে দিগুন-তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে বাস কোম্পানিগুলো। এমন অবস্থায় নিরুপায় যাত্রাপথে নির্বিচারে পকেট কাটা পড়ছে সাধারণ যাত্রীদের।
মহামারি করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল সবধরনের গণপরিবহন। টানা ছুটির শেষে গত রোববার থেকে একটি সিট খালি রাখা, মাস্ক পরিধান করা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করাসহ বেশকিছু নির্দশনা ও শর্ত দিয়ে ট্রেন-লঞ্চ-বাস।
ট্রেনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও বাস ও লঞ্চে অনেকটাই উপেক্ষিত। ট্রেনে ও লঞ্চে কোনো রকম ভাড়া না বাড়লেও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে গণপরিবহন সীমিত আকারে চলার ক্ষেত্রে ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তবে সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে, জারি করা প্রজ্ঞাপণের কোনো শর্তই মানছেন না গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকাগামী পরিবহনগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা, যশোর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকাগামী এসব বাস বেঁধে দেওয়া ভাড়ার কোনো তোয়াক্কা করছে না।
সিলেট থেকে ঢাকায় আসা রুপসী বাংলা, ইউনিকসহ বেশকিছু দুরপাল্লার বাস যাত্রীদের কাছ থেকে দিগুন ভাড়া আদায় করছে। রুপসী বাংলা দিয়ে বিয়ানীবাজার থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ এসেছেন মাওলানা একরাম। তিনি বলেন, ‘আগে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা ভাড়া রাখতো আজকে (মঙ্গলবার) ভাড়া রাখছে সাতশো করে। কি করবো? সরকার নাকি ভাড়া বাড়াইছে, সবাই দিতেছে তাই বাধ্য হয়ে আমিও দিলাম।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকাগামী দুরপাল্লার সোহাগ, তিশা, রয়েলসহ সবগুলো বাসেই আদায় করা হচ্ছে দিগুন ভাড়া। রোমান মিয়া নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আগে দুইশ টাকা করে পৈরতলা থেকে ঢাকা আসতাম, আজকে আসছি চারশ টাকা দিয়া। তাও পিছনের সীটে বইসা আসছি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, কমলাপুর রেল স্টেশনের সামনে একটি মাইক্রোবাস থেকে নামেন ১২ জন যাত্রী। এতো গাদাগাদি করে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, ‘আমাদের ফ্যাক্টরি খুলছে, তিন মাস ধরে কাজ নাই। বাসে সিট না পাইয়া মাইক্রো দিয়ে সাতশ টাকা করে আশুগঞ্জ থেকে আসছি। কিন্তু আশুগঞ্জ থেকে ঢাকার বাস ভাড়া দুইশ টাকা।
এদিকে ঢাকার সায়েদাবাদ, গোলাপবাগ, কমলাপুর, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে বাড়ি যেতেও কাউন্টারগুলোতে টিকিট সংগ্রহ করতে যাত্রীরা শারীরিক দূরত্ব মানছে না। গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনছেন। অতিরিক্ত ভাড়ার নেওয়ার জন্য পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন অনেকে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহর কাছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি আমাদের লাভ হবে না। কারণ আমাদেরকে অর্ধেক যাত্রী নিতে হচ্ছে। আর দুই মাস বসে থেকে আমাদের গাড়ির অনেক যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে গেছে। কোনো আয় হয়নি। তারপরও আমরা সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে যাবো না।’
এনায়েত উল্ল্যাহর দাবি, একজন যাত্রীর পাশে একটি সিট খালি রাখতে হচ্ছে। কিন্তু সেই যাত্রী ষাট শতাংশ ভাড়া দিলেও খালি সিটের পয়সা কিন্তু উঠে আসছে না। অন্য দিকে গাড়ির চালক ও স্টাফদেরকে ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এসব কারণে আমরা সরকারে কাছে যৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করছিলাম। কিন্তু সেটা হলো না। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ দুই মাস বসে থাকা শ্রমিকদের ওপর ৬০ শতাংশ ভাড়া অতিরিক্ত চাপ। পরিবহণের অনিয়ম বন্ধ করলে বাস ভাড়া বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন হবে না বলে আমার বিশ্বাস। এই বিষয়ে আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে অনুরোধ করবো ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি যেন বিবেচনা করা হয়।’
বাসে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লবের করা রিটটি বিচারপতি জেবিএম হাসানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন।