সাহেদ কাণ্ড: বিদেশি কূটনীতিকদের চিকিৎসায় তালিকাভুক্ত ছিল রিজেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ। ফাইল ছবি

দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের প্রথম দিকে বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য সরকার ৪টি হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল ভুয়া করোনাভাইরাস পরীক্ষাসহ নানা অভিযোগে সিলগালা হওয়া রিজেন্ট হাসপাতালটিও। তবে হাসপাতালটির প্রতারণা থেকে রক্ষা পেয়েছেন বিদেশিরা। কারণ করোনা উপসর্গ নিয়ে ওই হাসপাতালে কোনো কূটনীতিক যাননি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে ৪টি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রিজেন্টও ছিল। তবে মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, কোনো কূটনীতিক সেখানে চিকিৎসার জন্য যাননি।’

জানা যায়, গত ২৪ মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড এবং বসুন্ধরাস্থ এভারকেয়ার হাসপাতাল অর্থাৎ এই তিনটি হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে ঢাকাস্থ সব বিদেশ মিশনে নোট ভারবাল পাঠায়। তাতে করোনা চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে কূটনীতিকদের এই তিনটি হাসপাতালে যোগাযোগ এবং যেতে বলা হয়েছিল।

ওই দিন কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষায় সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান, ইতালি ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের প্রধান অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. খলিলুর রহমান তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এর আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৯ জন রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেন। তারাও করোনা পরিস্থিতি বিশেষত কূটনীতিকদের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থার অনুরোধ করছিলেন বলে জানা গেছে।

এরপর ২ এপ্রিল সব মিশনে দ্বিতীয় দফায় বিদেশি নাগরিকদের করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত নোট ভারবাল পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে নতুন করে আগের তিনটির সঙ্গে আরেকটি হাসপাতাল তথা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালের নাম যুক্ত করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য রিজেন্ট হাসপাতাল তালিকাভূক্ত করার বিষয়ে সায় ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। সেজন্য রিজেন্টকেও তালিকায় রাখা হয়েছিল।

করোনা চিকৎসা নিয়ে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত সোমবার রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে র‍্যাব। এতে করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ মেলে। অন্তত ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় অভিযানে।

পরদিন মঙ্গলবার রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়।

১৭ জন আসামির মধ্যে এমডি মাসুদ পারভেজসহ আট জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে রিজেন্ট চেয়ারম্যান শাহেদসহ ৯ জন পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে র‍্যাব।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে