শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭০৪ কোটি টাকা

মত ও পথ প্রতিবেদক

খেলাপি ঋণ
প্রতীকী ছবি

ঋণ পুনঃ তফসিল এবং করোনায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেওয়ার পরও শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ কমেনি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭০৪ কোটি টাকা। ফলে গত মার্চ শেষে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি।

গত বছরের শেষ তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ ও আদায় দুই-ই কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ হওয়ার পর থেকেই ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমার পাশাপাশি আদায়ও অনেক কমে গেছে। এ সময়ে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উৎপাদনমুখী শিল্প তাদের পণ্য বিক্রি করতে না পারায় ঋণের টাকাও ফেরত দিতে পারেনি। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরেদের আয় কমে যাওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়ের ঋণের টাকাও ফেরত আসেনি। এতে স্বাভাবিকভাবে খেলাপি ঋণ অনেক বাড়ার কথা।

তবে এপ্রিলে এক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ঋণের টাকা ফেরত না দিলেও জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গ্রাহককে নতুন করে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না। তাদের ঋণের মান ডিসেম্বরে যা ছিল, তা-ই দেখাতে হবে। এই ছাড়ের সময়কাল পরবর্তী সময়ে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহক কোনো টাকা ফেরত না দিলেও খাতা-কলমে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়বে না। এতে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমেছে। তবে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ কমেনি, বরং উল্টো ৭০৪ কোটি টাকা বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসে শিল্প খাতেও খেলাপি ঋণ কমার কথা। কিন্তু বাড়ল কেন সেটা বুঝতে পারছি না। কোথায় গণ্ডগোল হলো, সেটা আমরা খতিয়ে দেখব।

তিনি বলেন, বিশেষ পুনঃ তফসিল ও এক্সিটসংক্রান্ত বিশেষ পুনঃ তফসিল নীতিমালার আওতায় এ প্রান্তিকেও অনেক ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে। আর শিল্প খাতেই পুনঃ তফসিল বেশি হয়েছে। এতে শিল্প খাতে কোনোভাবেই খেলাপি ঋণ বাড়ার কথা নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯.০৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ৯.৩২ শতাংশ। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে শিল্প খাতে এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪৫ হাজার ১২৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪৫ হাজার ৮৩১ কোটি ১২ লাখ টাকা। শিল্প খাতে মোট খেলাপির মধ্যে মেয়াদি শিল্প ঋণ খাতে খেলাপি ৩১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা এবং চলতি মূলধন ঋণ খাতে খেলাপি হয়েছে ১৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ হয় প্রায় ৯১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ তিন মাসে বিতরণ হয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। ফলে আগের তিন মাসের চেয়ে গত তিন মাসে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ১৭.৮৮ শতাংশ। তবে গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১.৯৩ শতাংশ।

অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম তিন মানে শিল্পঋণ আদায় হয় ৭৮ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ তিন মাসে আদায় হয়েছিল ৮৯ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। ফলে আগের তিন মাসের চেয়ে গত তিন মাসে ঋণ আদায় কমেছে প্রায় ১২.৫৭ শতাংশ। তবে গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ আদায় বেড়েছে ৪.৮০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে শিল্প খাতে বকেয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে