বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পালিত হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস।
দিবসটি উপলক্ষে শনিবার (১৫ আগস্ট) সকালে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান, পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিসুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার প্রফেসর ফাহিমা খাতুন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অতিথিবৃন্দ জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সবার জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতির জনকের প্রতিকৃতি উন্মুক্ত করা হয়।
পরে স্থানীয় আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দোয়া ও শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোকতাদির চৌধুরী এমপি বক্তব্যের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’সহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, দুঃখ, বেদনা আর অন্তহীন শোক নিয় শোকের মাস আগস্ট আবার আমাদের জীবনে হাজির হয়েছে। শুধুমাত্র স্বাধীন বাংলাদেশের নয়, বাঙালির ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ড ঘটেছিল এই মাসের ১৫ তারিখে। এটি মানবতিহাসেরও অন্যতম নৃশংস হত্যাকান্ড। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিল একদল ঘৃণ্য হায়েনা, যাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ আর সেনাবাহিনীর এক দলছুট ঘাতকদলও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছিল। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নিতে, মুক্তিযুদ্ধের সুফলকে ও আদর্শকে মুছে ফেলতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। কারণ তারা জানত যে, বঙ্গবন্ধুকে সশরীরে হত্যা না করতে পারলে রাষ্ট্র ক্ষমতা তাদের হাতে আসবে না এবং ভাবাদর্শগতভাবে তারা সফলকাম হবে না।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা, গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থা, বাঙালির সার্বভৌম ক্ষমতায় বিশ্বাসী শেখ মুজিব রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে ধর্মকে দূরে রাখতে চেয়েছিলন। তাই তিনি গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মূলনীতি হিসবে (বাঙালি) জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র (শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ) ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে স্থান দিয়েছিলেন। এই মূলনীতি চতুষ্ঠয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরও ভিত্তি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ১৯৭৫ সালের পর একটা সময় ছিল, যখন আমরা জাতির পিতার নাম পর্যন্ত নিতে পারিনি। শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তার নেতৃত্বে দলকে পুনর্গঠন করার পাশাপাশি তার নেতৃত্বে আমরা সরকার গঠন করতে সক্ষম হই। এরপর থেকে আমরা জাতির জনকের জীবন আদর্শ পালন করে আসছি। আমরা শোক দিবস পালন করছি সেটা যেমন বড় কথা, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা।
জেলা প্রশাসক মোঃ হায়াত-উদ-দৌলা খাঁনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোক সভাশ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার।
আলোচনা সভার শুরুতে ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহিদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা এবং দোয়া করা হয়।